আইন-আদালত

আদালত খুলে দেয়ার দাবি: মামলাজটে বিপর্যস্ত বিচার বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কখনও লকডাউন, কখনও বিধিনিষেধ, আবার কখনও অবকাশকালীন ছুটিতে লাখ লাখ মামলা ঝুলে আছে। বর্তমানে উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষাধিক।

সামনে এ মামলাজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বিচারসংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে মামলাজট ৩৮ লাখ থেকে ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। ফলে বর্তমান সংকট সমাধানে উচ্চ আদালতের মতো নিম্ন আদালতেও বৃহত্তর পরিসরে ব্যাপকভাবে বিচারকাজ পরিচালনার তাগিদ দিয়েছেন তারা। প্রয়োজনে বাৎসরিক অবকাশ কমানোর পরামর্শও দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উচ্চ আদালতসহ দেশের অধঃস্তন আদালতগুলোতে প্রায় ৩৮ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ২৩ হাজার ৬১৭, হাইকোর্ট বিভাগে চার লাখ ৮৯ হাজার ৬৮টি। ৬৪ জেলার অধঃস্তন আদালতে ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৪৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে হিসেবে মাত্র এক দশকে মামলা বেড়েছে ১৬ লাখের বেশি। এদিকে লকডাউনের কারণে ২০২০ সালের প্রায় শুরু দীর্ঘ সময় উচ্চ ও অধঃস্তন আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ ছিলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের মামলার পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। হালনাগাদ কাজ সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল বলেন, লকডাউন বিচার বিভাগের বিদ্যমান সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগেই প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন ছিলো। যেহেতু দুই বছর ধরে করোনার স্বাভাবিক বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। লাখ লাখ মামলা ঠিকই হয়েছে। কিন্তু নিষ্পত্তি হয়েছে নামমাত্র। তাই মামলাজট ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিষ্পত্তি বাড়ানো ও জটের লাগাম টেনে ধরতে হলে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে বেশি নজর দিতে হবে। আবার নিম্ন আদালতের বিচারকদের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে ও অবকাশকালীন ছুটি কমিয়ে দিতে হবে।

প্রধান বিচারকের কাছে নিম্ন আদালত খুলে দেয়ার দাবি:

বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য দেশের সকল নিম্ন আদালত খুলে দিতে এবং সুপ্রিম কোর্টে বেঞ্চ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে প্রধান বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে একটি আবেদন জানানো হয়েছে।

বুধবার সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী আবেদনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ এক বছর লকডাউনের কারণে আইন পেশা গভীর খাদে পরে আছে। আইনজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বিগত ১৩ মার্চ পর্যন্তও হাইকোর্ট বিভাগে ৩৫ টি ভার্চুয়াল কোর্ট ও ১৮ টি রেগুলার (শারীরিক উপস্থিতিতে) কোর্ট চলমান ছিল এবং নিম্ন আদালতে নিয়মিত কোর্ট চালু ছিল। তাই আগামী ৩০ মে থেকে আগের মতো হাইকোর্ট বিভাগে ৩৫টি ভার্চুয়াল কোর্ট এবং ১৮টি রেগুলার কোর্ট এবং নিম্ন আদালতে পুরোপুরি নিয়মিত কোর্ট চালু করার জন্যে আবেদনে প্রধান বিচারকর কাছে সবিনয় অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Back to top button