উন্নত জাতের পেঁপে চাষে টানা ৬ বার সফল জহিরুল

গাজীপুর সংবাদদাতা: জহিরুল ইসলাম সরকার। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের পাথারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। টানা ছয়বার টপলেডি জাতের পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি বর্তমানে উপজেলার সফল মানুষের এক অনন্য উদাহরণ।
জহিরুলের বাগানের পেঁপে বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় রপ্তানি হচ্ছে। সাত বিঘা জমিতে শুধু সবুজ পেঁপে গাছ আর প্রতিটি গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় পেঁপে। তার বাগানের ফলন দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও।
উপজেলার পাথারপাড়া গ্রামের রাইজুদ্দিন সরকারের ছেলে জহিরুল ইসলাম সরকার টগবগে এক যুবক। একসময় তিনি পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলেন লেয়ার মুরগির খামার। খামারে একটুও সুবিধা করতে পারেননি এই যুবক। কথা ছিল স্বাবলম্বী হবেন কিন্তু হয়েছেন ১৫ লাখ টাকা ঋণ। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ঢের ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। কী করবেন, কোথায় যাবেন, নতুন কী কর্ম করে ঋণ থেকে মুক্তি পাবেন? দিশেহারা হয়ে ২০১৬ সালে পেঁপে চাষ করার উদ্যোগ নেন তিনি।
প্রথম বছর চাচাদের কাছ থেকে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। সেবছর বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৭ সালে ৪ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এরপর থেকে জহিরুলের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধারাবাহিকভাবে পেঁপে চাষ করতেই থাকেন।
জহিরুল বলেন, ৬ বছর ধরে টপলেডি জাতের পেঁপে আবাদ করে ঋণমুক্ত হয়েছি। সংসারের অভাব-অনটন অনেকটা দূর হয়েছে। প্রতি মৌসুমে নিজেদের চাহিদা পূরণ করাসহ সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৬ লাখ টাকা মুনাফা থাকে। গত বছর পেঁপের আবাদ করে সাড়ে ৭ লাখ টাকা খরচ করেছি, মুনাফা পেয়েছি ১২ লাখ টাকা। এই মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকলে প্রতি মণ কাঁচা পেঁপে ১৫০০/১৬০০ টাকা ও পাকা ২৮০০/৩০০০ টাকা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থোকায় থোকায় পেঁপে ধরা গাছগুলো দঁড়ি ও বাঁশ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা তার বাগানের পেঁপে কিনে নিয়ে যান। সামনে আরও বেশি জমিতে পেঁপে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে বলে পেঁপে চাষি জহিরুল জানান। তিনি ভবিষ্যতে এই পেঁপে চাষকে নিজের এলাকাসহ দেশের বেকার মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএসএম ময়ীদুল হাসান বলেন, উঁচু জমিতে পেঁপে চাষ করতে হয়। পেঁপে চাষি জহিরুলের সফলতার পেছনে রয়েছে তার নিরলস প্রচেষ্টা। উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সবসময় সার্বিক পরামর্শ দিয়ে আসছে বলেও জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।