জাতীয়বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোশাল মিডিয়ার কাছে বিটিআরসি অসহায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোশাল মিডিয়ার কনটেন্ট অপসারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ‘অসহায়ত্বের’ কথা স্বীকার করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইচ্ছা করলেই কানো কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে পারে না।

সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কার্যালয়ে সোশাল মিডিয়া, কন্টেন্ট ও আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, অনেক জায়গায় অসহায়ত্ব ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। নানা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে তেমনি অপরাধগুলোও বাড়ছে।
“এক সময় বিটিআরসি আইএসপি ও টেলকোগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, এছাড়া আর কিছু করতে পারত না। বর্তমানে ওয়েব সাইটগুলো বাংলাদেশের সীমানায় বন্ধ করতে পারি।”

পর্নগ্রাফির সাইট, জুয়ার সাইট যখনই পাওয়া যাচ্ছে বন্ধ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাকি বিষয়গুলোতে আমরা এক ধরনের অসহায়ত্বে আছি, তা হলো সোশাল মিডিয়া, আমরা তাদের কৃপার উপর নির্ভরশীল।

“তারা তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে কাজ করে, তারা তাদের মত করে কাজ করে। তারা কথাবার্তা শোনে না, তবে এর আগে আরও খারাপ ছিল। ফেইসবুকের সাথে আমাদের নিয়মিত কথাবার্তা হয়।”

সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত ভিডিও, ছবি অপসারণে বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে রোববার উষ্মা প্রকাশ করে হাই কোর্ট। তার একদিন পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আদালতের বক্তব্যর প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, “আদালত কী বক্তব্য দিয়েছে তা মিডিয়াতে দেখেছি।

“আদালতের বক্তব্যের জন্য আমরা এ সংবাদ সম্মেলন করিনি, বিটিআরসি কী পারে আর না পারে সেজন্য এ সংবাদ সম্মেলন করেছি। আমাদের অবস্থান আমরা তুলে ধরেছি।”
বিটিআরসির ক্ষমতার বিষয়টি বোঝার আহ্বান জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “যারা ডিজিটাল অপরাধ নিয়ে আইন আদালতের কাছে যান, তারা অন্ততপক্ষে আমাদের অবস্থাটা বুঝবেন।

“সেই পরিস্থিতে আমাদের, বিটিআরসির তালা মারার কতটা সক্ষমতায় আছে তা বুঝতে হবে। যে জায়গায় কাজ করার ক্ষমতাই রাখি না, সেখানে দায় দিলে আমার উপর অবিচার করা হবে।”

ডিজিটাল অপরাধের পরিধি বাড়ছে মন্তব্য করে সেসব দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার কথা বলেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।

“প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে নতুন প্রযুক্তি আনতে হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের কোথাও কোনো ক্রটি পাবেন না।”

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানায়, মন্ত্রী ও সচিব বিটিআরসির ‘অভিভাবক’ হিসেবে কাজ করে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনা নিয়েই তারা কাজ করেন।

“বিটিআরসি কীভাবে চলবে তার আইন রয়েছে, সে আইন অনুযায়ী কাজ করে থাকি। আইনে ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও কিছু লিমিটেশনস আছে। টেকনোলজি বিষয়টা হচ্ছে সাইবার জগৎ, উম্মুক্ত বিশ্ব।

“মহাশূন্যে কেউ ঘুড়ি উড়াতে চায়, তাহলে যে কেউ উড়াতে পারে, সোশাল মিডিয়ায় সুতা কাটার বিষয় বিটিআরসির হাতে নেই। ফেইসবুক ও ইউটিউবের সহযোগিতা ছাড়া কিছু করতে পারি না।”

এসব বিষয় নিয়ে ফেইসবুক ও ইউটিউবের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনায় বসার কথা জানিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেছে, “তাদের বলেছি দেশে অফিস করতে, তবে এখনো রাজি করাতে পারিনি।

“যেসব আপত্তিকর কনটেন্ট অনুরোধ করে সরানো হয়েছে, অনেকগুলো করা হয়নি, কারণ তারা তাদের আইন অনুযায়ী চলে, তারা বলছে তাদের দেশের আইন অনুযায়ী এটি সরানো যায় না।”

বিটিআরসি প্রধান জানায়, “বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, অনেক নারী বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। এক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ করি একটি জিডি করে আমাদের কাছে আসুন।

“ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মাধ্যমে আসলেও দেখি। সরাসরি দেখি না তেমন না, তাও দেখি। আমরা হার্ড কপি, ই-মেইলে বা হট নম্বরে অভিযোগ পাচ্ছি। বিটিআরসি চাইলেই সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট রিমুভ করতে পারে না।”

আদালতের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়নি মন্তব্য করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানায়, “আমরা আদালতের বক্তব্য দেখেছি, সেই বক্তব্যের পরই অনেকগুলো কনটেন্ট রিমুভ করার জন্য বলা হয়েছে।

“সব সময় সোশাল মিডিয়ায় আপত্তিকর কনটেন্ট নজরদারি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সক্ষমতা তৈরি হলে আমরা সব সময় নজরদারি করতে পারব।”

তবে ‘নিজেদের’ মধ্যে সমন্বয়ের কিছু ঘাটতি আছে মন্তব্য করে সে বলেছে, “আমরা বসে নেই, জনস্বার্থে কাজ করছি, মানুষ জানতে পারে না, যারা ভুক্তভোগী, তারা জানে কতটুকু উপকার পেয়েছেন।”

Back to top button