অর্থ-বাণিজ্য

অবহেলায় বিদেশে সবজি রপ্তানিতে শীর্ষস্থান হারিয়েছে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক:লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপল দেখে মনে হলো যেন একখ- কারওয়ান বাজার। শিম, আলু, শসা, ঢেঁড়স, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, কদু সবই বিক্রি হচ্ছে।

হোয়াইট চ্যাপেলের সড়কের পাশে নানা ধরনের সবজি বিক্রি করছেন কুমিল্লার রফিকুল আলম। প্রায় ১৫ বছর আগে বাবার সঙ্গে লন্ডন আসেন তিনি। এখন হোয়াইট চ্যাপেলে সবজি বিক্রি করেন। গড়ে দৈনিক ৫০০ পাউন্ড আয় করেন। ফলে সবজি বিক্রি করে তার মাসে আয় হয় ১৫ হাজার পাউন্ড। তবে এর মধ্যে একজন শ্রমিক খরচ ও মাসে সাড়ে তিন হাজার পাউন্ড দোকান ভাড়া দেওয়া লাগে।

রফিকুল আলম বলেন, এক সময় সবজি মানেই বাংলাদেশের ছিল। কিন্তু এখন বিভিন্ন দেশ থেকে সবজি আসছে। আমাদের দেশ থেকে সেভাবে সবজি রপ্তানির দাপট নেই।
ওই এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, থাইল্যান্ড থেকে ক্যাপসিকাম, জর্ডান থেকে পাটশাক, মালয়েশিয়া থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পাকিস্তান থেকে বরবটি আমদানি হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। ফলে ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যে সবজির বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

ব্রিটিশ বাংলাদেশি ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফুল-সবজি-মাছ) জানায়, ১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্যে সবজি, মাছ ও ফলের বাজার ছিল ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এর ৯৮ ভাগই বাংলাদেশের দখলে ছিল। এখন এসব নিত্যপণ্যের মোট বাজার ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। তবে এখন বাংলাদেশ মোট রফতানির অবদান রাখছে ৬০ ভাগ। বাকি ৪০ ভাগ নিয়ে গেছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইতালি, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম।

যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশের সবজি, মাছ ও ফল বিশেষ করে আমের (আম্রপালি) বিশাল চাহিদা। সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণ ও যথাযথভাবে কার্গো বিমান পরিচালনার মাধ্যমে পুরোনো বাজার ফিরে পেতে পারে বাংলাদেশ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে শাকসবজি ও ফলমূল রফতানির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রফতানি পণ্যের মানদ- অনুসরণ না করায় ওই বাজার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কারণ এদেশ থেকে রফতানি করা শাকসবজি ও ফলমূলে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের উপস্থিতিসহ নানা কারণে নন-কমপ্লায়েন্সের অভিযোগ ছিল। ওসব কারণে বিভিন্ন সময় কৃষিপণ্যের রফতানি চালান বাতিলও হয়েছে। এমনকি কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে শাকসবজি ও ফল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।

শাকসবজি ও ফলমূল মালয়েশিয়া, ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যে রফতানির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তবে সেজন্য বাংলাদেশের পণ্যকে কম্পিটিটিভ হতে হবে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপসের মতো আলুকে প্রসেস করতে পারলে রফতানি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার ব্যবস্থাসহ প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে জমি এবং ঋণ দুটোই প্রয়োজন।
কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কিছু বাধাবিপত্তি থাকলেও সেগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। এদেশে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্যাকেজিং সমস্যা নেই। পণ্যবাহী কার্গো স্পেস বাড়ানো ও উচ্চ ভাড়া হ্রাস করতে পারলে রফতানি বাড়বে। আর যে জেলায় যে ফসল উৎপাদন ভালো হয়, ওই জেলায় ওই ফল উৎপাদনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া রফতানি মনিটরিংয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি কমিটি গঠন করতে হবে। এছাড়া ইপিবি, বিমান পরিবহন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার।

ব্রিটিশ বাংলাদেশী ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (ফুল-সবজি-মাছ) সভাপতি রফিক হায়দার বলেন, একসময় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে একচেটিয়া সবজি রফতানি হতো। ১৯৮১ সালে এর বাজার ছিল ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা সবই বাংলাদেশের দখলে ছিল। এখন লন্ডনে সবজির চাহিদা বাড়ছে অথচ প্রসেসিংসহ নানা কারণে বাংলাদেশ বাজার ধরে রাখতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ খাতে নজর দিলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। এখন বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য দেশের মানুষ সবজি পছন্দ করে। কিন্তু অবহেলার কারণে বাংলাদেশের বাজারে ভাগ বসিয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইতালি।

Back to top button