অর্থ-বাণিজ্যকৃষি

আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হচ্ছে মেহেরপুরের বাঁধাকপি

মেহেরপুর সংবাদাদাতা: মেহেরপুর জেলায় উৎপাদিত বাঁধাকপি-ফুলকপি দেখতে সুন্দর, খেতেও সু-স্বাদু। দেশের বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। উৎপাদিত বাঁধাকপি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশের চাহিদা পূরণ করে আসছে বহু বছর থেকে। শুধু নিজের দেশেই নয় বিশ্ববাজারেও দিনদিন মেহেরপুর জেলার কপির চাহিদা বাড়ছে। দেশের বাজারে পরিচিত সবজি চাষখ্যাত মেহেরপুর জেলার চাষিদের ভাগ্যে বইছে সুবাতাস।

তবে নিরাপদ সবজি হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছে মেহেরপুর জেলার চাষিদের উৎপাদিত নিরাপদ এ সবজি। মেহেরপুরের বাঁধাকপি এখন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে যাচ্ছে। এই রফতানিতে সবজি চাষের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। দেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে চাহিদা থাকায় এবং আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ও বিদেশে নিরাপদ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মেহেরপুর। এ জেলায় সারাবছরই সব ধরনের সবজি চাষ হয়। যা বিদেশে বেশি বেশি রফতানি করতে পারলে চাষিরা যেমন উপকৃত হবে তেমন আর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

এ লক্ষ্যে মেহেরপুরের চাষিরা এক হাজার হেক্টর জমিতে কীটনাশক সহনশীল ও নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি চাষ করছেন। গত বছরে ৫০০ মেট্রিক টন রফতানি হয়েছিল এশিয়া মহাদেশের তিনটি দেশে। চলতি মৌসুমে চারটি দেশ ১৫০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপির নেওয়ার চাহিদা দিয়েছে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। সে মোতাবেক সরবরাহ করা হবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশে।

কৃষকদের কাছ থেকে কপিগুলো সংগ্রহ করছেন রফতানিকারক। খেত থেকে সাদা কাগজে মুড়িয়ে বস্তাভর্তি করে রফতানি উপযোগী করা হচ্ছে বাঁধাকপি। রফতানিকারকদের মাধ্যমে বাঁধাকপি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেক ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুক্তিবদ্ধ কয়েকজন কৃষক। রফতানিকারকরা কৃষকের জমি থেকেই নিরাপদ বাঁধাকপি সংগ্রহ করেছেন।

নাজ এন্টারপ্রাইজ ও এগ্রো ফ্রেশসহ বেশ কয়েকটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষকদের জমি থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ শুরু করেছে।রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কৃষি অফিসের সহায়তায় শুধুমাত্র মেহেরপুরের দুটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে বাঁধাকপি সংগ্রহ করছে।

সরেজমিনে গাংনী উপজেলার কোদাইলকাটি গ্রামের কৃষক আজগর আলীর বাঁধাকপির জমিতে গিয়ে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনায় বাঁধাকপি খেত থেকে সংগ্রহের আগেই নিরাপদ সবজির প্রক্রিয়া করা হয়। কপি কাটার পর সাদা কাগজে জড়িয়ে নেট বস্তায় ভর্তি করা হচ্ছে।

এ সময় সবজি উৎপাদনকারী কৃষক বলেন, প্রতি বছরেই শীতকালের সবজি চাষে আমাদের লোকসান হয়। এভাবে সবজি বিদেশে রফতানি করতে পারলে আমরা অতি আনন্দে সবজি চাষ বৃদ্ধি করতে পারব। একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন সবজি গ্রামখ্যাত সাহারবাটির নিরাপদ সবজিচাষি তৈয়ব আলী, তবারক হোসেন, বেল্টু মিয়াসহ অনেকেই।

নিজের দেশের উৎপাদিত সবজি বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান বেড়েছে বলে জানান শ্রমিক সর্দার মো. জনি।

এগ্রো ফ্রেশ নামের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার রুবেল আহমেদ বলেন, এ বছর চুক্তিবদ্ধ ৪৫ জন কৃষকের ৭৫ একর জমি থেকে নিরাপদ উপায়ে চাষ করা হয়েছে বাঁধাকপি। জমিতে চারা রোপণের পর থেকে কপি সংগ্রহ করা পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে রফতানি উপযোগী করা হয়। এ বছর রফতানিতে বেশ চাহিদা আছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে রফতানি করা হয়েছিল। এ বছর নতুন দেশ হিসেবে তাইওয়ান ও ইন্দোনেশিয়ায় রফতানি করা হচ্ছে।

রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে আমাদের জেলায় উৎপাদিত বাঁধাকপির মূল্য থাকলেও শেষের দিকে এসে কৃষকরা একেবারেই মূল্য পায় না। অনেক সময় পরিবহন খরচ হয় না। এ সময় অন্যদেশে রফতানি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে অন্য দেশে এর বাজার তৈরি করলে কৃষকরা উপকৃত হবে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খা বলেন, আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এ বছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। নতুন নতুন দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা।

Back to top button