রাজনীতি

মেধাবী মানুষ রাজনীতিতে না এলে মেধাহীনরা এমপি-মন্ত্রী হবে : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্ত্রাস ও দুর্নীতি থেকে নেতাকর্মীদের দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মেধাবী মানুষ রাজনীতিতে না এলে মেধাহীনরা এমপি-মন্ত্রী হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে দেশের রাজনীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে বেশি বেশি নীতির কথা যারা বলে, তারাই দুর্নীতি করে। বেশি গণতন্ত্রের কথা তারাই বলে, যাদের মুখে গণতন্ত্র, অন্তরে স্বৈরাচার। এদের চিহ্নিত করতে হবে।

সন্ত্রাস কত প্রকার ও কী কী, এটা বিএনপির চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন শহীদ মিনার শান্তিপূর্ণ প্রভাতফেরির চমৎকার জায়গা। এ শহীদ মিনারে বিএনপি প্রথম রক্ত ঝরিয়েছে। আমাদের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সেখানে কুপিয়ে আহত করা হয়েছিল। তিনি বেঁচে থাকবেন এ ভরসা ছিল না। শহীদ মিনারে যারা রক্ত ঝরিয়েছে, তারা এখন বর্তমান সরকারের আমলে সন্ত্রাসের কথা বলে।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি কত মানুষ, কত কৃষক, কত শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে তার হিসেব নেই। রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে, রাস্তা কেটে ফেলেছে, ভূমি অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, বাস, রেল লাইন পুড়িয়েছে, নিরীহ যাত্রী, স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী পুড়িয়েছে। এসব অপকর্ম যারা করেছে, তাদের মুখে সন্ত্রাসের বুলি, ভূতের মুখে রাম রামের মতো।

এ সময় তিনি শিশু-কিশোরদের সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানুষের মতো মানুষ হতে হলে মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই তোমরা ভালো মানুষ হতে পারবে।

দেশের রাজনীতিতে আরও চরিত্রবান লোক দরকার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ক্ষমতার মঞ্চে চরিত্রবানরা না থাকলে, চরিত্রহীনদের খপ্পরে থাকবে দেশ। ভালো মানুষ না থাকলে, খারাপ মানুষ দেশ চালাবে। মেধাবীরা না এলে, মেধাহীন লোকেরা এমপি-মন্ত্রী হবে। তাতে দেশের কোনো উপকার হবে না।

তিনি বলেন, আজকাল সংগঠন মানেই চাঁদাবাজি। নতুন নতুন দোকান খোলে একটা নাম দেয়, ওই নামে বিশেষ বিশেষ দিনে চাঁদাবাজি করে। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ এর থেকে দূরে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, এ আশা করছি।

অর্থ ছাড়া আজকাল রাজনীতি বড়ই কঠিন দাবি করে তিনি বলেন, শুধু আদর্শ দিয়ে আজকাল রাজনীতি চলে না। এ দেশে এখন একজন আদর্শবাদী নেতা শুধু আদর্শের জোরে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জিততে পারেন না। টাকা ছাড়া কর্মীও পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় শিশু কিশোরদের একটি সংগঠন গড়ে তোলা খুবই কঠিন কাজ। সেই জায়গায় শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ একটি সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোররাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি সবসময় বিশ্বাস করি আমার ভাগ্যের চেয়ে বেশি কিছু আমি পাব না। আমার সময়ের আগেও আমি পাব না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে ভাগ্য যেমন লাগে, তেমনি সময়ও লাগে। অস্থির হলে হবে না। ধৈর্য ধরতে হবে, লেগে থাকতে হবে। ঝড়ে, জলোচ্ছ্বাসে, অন্ধকারে, দুর্যোগে, বিপদে-আপদে, আঁধারে লেগে থাকতে হবে। যে লেগে থাকতে পারে না, সে কোনো দিনও বড় হতে পারবে না। জীবনে লক্ষ্য ঠিক করে সেদিকে এগিয়ে যেতে হবে।

উপস্থিত শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ জীবন সংগ্রামে তোমরা কখনো হতাশ হবে না, কখনো নিরাশ হবে না। জীবন একটাই, লড়াই করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জীবনের অপর নাম হচ্ছে লড়াই, জীবনের অপর নাম হচ্ছে সংগ্রাম, জীবনের অপর নাম হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। যে নদীতে ঢেউ নেই, সেটা নদী নয়। যে সাগরে গর্জন নেই, সেটা সাগর নয়। যে আকাশে মেঘ নেই, সেটা আকাশ নয়। এটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ, যা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে. এম. শহিদ উল্যার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পন্টু, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, তরফদার মো. রুহুল আমিন, নাজমুল হক, সাংগঠনিক সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন প্রমুখ।

Back to top button