জাতীয়

পঞ্চগড়ে বালু উত্তোলনে ৩৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

নিউজ ডেস্ক: পঞ্চগড়ে পাথর ও সমতলের সবুজ চা শিল্পের পর যুক্ত হয়েছে নদী কেন্দ্রিক বালু ব্যবসা। কয়েক বছর ধরে জেলার অর্থনীতিতে এই ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এ ব্যবসা ঘিরে এখন বছরে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে ৩৫০ কোটি টাকা।

উত্তরের এ জেলায় প্রবাহিত হচ্ছে কয়েক ডজন ছোট-বড় নদ-নদী। এসব নদীর মধ্যে মহানন্দা, করতোয়া, ডাহুক, চাওয়াই, কুড়ুম, ভেরেসাসহ বেশ কিছু নদীর বিশাল এলাকা থেকে তোলা হচ্ছে উন্নতমানের মোটা দানার ও সিলিকা বালু।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৩৩টি নদী রয়েছে। প্রতি বৈশাখে তিনটি নদীর ১৫টি বালুমহাল ইজারা দেয় প্রশাসন। করতোয়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ১৫টি বালুমহাল থেকে নিয়মিত বালু তোলা হচ্ছে। এখান থেকে প্রায় ১৮ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বালু বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। বর্তমানে জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই বালু।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার তেঁতুলিয়ার মহানন্দা, করতোয়া ও ডাহুক নদীর তীরবর্তী এলাকা এবং সদর উপজেলার মীরগড়, আমতলা, বোদা উপজেলার মাড়েয়া, তেপুখুরিয়া, বেংহাড়ি বনগ্রাম, দেবীগঞ্জের শালডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৬০০ বালুর পয়েন্ট রয়েছে। এসব পয়েন্টে বালু বেচাকেনায় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য আর্শীবাদ হয়ে উঠেছে।

ব্যবসায়ী ও বালু শ্রমিকরা জানায়, এখানকার নদী থেকে তোলা বালু ঝকঝকে ও গুণগত মানের। দেশজুড়ে চাহিদা রয়েছে সিলিকা ও মোটা দানার বালুর। বহুতল ভবন, সড়ক নির্মাণ, ইমারত, পাকাবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে এখানকার বালু। বালু শিল্প ঘিরে জেলার প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের হয়েছে কর্মসংস্থান হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন এখানকার ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক বালু পাঠানো হয় বিভিন্ন জেলায়। বালুর ধরণ অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ১১০০ ঘনফুট বালু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। রেকর্ড হারে কেনাবেচা হচ্ছে বালু। নদীর বালু সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে, তেমনি নদী বিধৌত অঞ্চলে গড়ে উঠা বালু কেন্দ্রিক ব্যবসা অর্থনীতিতে নতুমাত্রা যুক্ত করবে।

তবে বালু ব্যবসা ঘিরে নিম্ন আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান তৈরি হলেও বাড়েনি শ্রমিকদের শ্রমের মজুরি। শ্রমিকরা জানায়, তারা কঠোর পরিশ্রম করে দিনশেষে তাদের হাতে আসে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। দলবেঁধে ১০ চাকার একটি ট্রাকে বালু ভর্তি করতে পারলে তাদের মুজুরি আসে হাজার টাকার মতো।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ অঞ্চলে ড্রেজার মেশিনে পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর বালু কেন্দ্রিক অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। এখানকার বালু স্বচ্ছ ও ঝলক দানার। শতভাগ পরিছন্ন বালুতে মিশ্রতা নেই। ধুলি আর ময়লাবিহীন হওয়ায় বালুর চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪৫০ ট্রাক বালু বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। একটি বড় ট্রাকে (১০ চাকা) ৮০০ থেকে ৮৫০ ঘনফুট পর্যন্ত বালু পরিবহন করা হয়। এই বালু ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, খুলনাসহ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। জেলার বাইরের বালু ব্যবসায়ীরা এসে বালু কিনে নিয়ে যায়।

বালি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে পাথর, বালি ব্যবসা করে আসছি। এখন পাথর ব্যবসা বন্ধ। বালি ব্যবসা করছি। আমাদের এ বালি উৎকৃষ্টমানের। এ বালি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের সব প্রান্তে পাঠাচ্ছি। সাধারণ গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে থাকি। রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঢাকাতেও বালি বিক্রি হয়ে থাকে। আমাদের বালিটা মানসম্মত। নির্মাণাধীন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বালি কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আমরাও চলতে পারছি ভালোভাবে।’

পঞ্চগড় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘পঞ্চগড়ে ৩৩টি নদী রয়েছে। এ ৩৩টি নদীর মধ্যে ১৫টি বালু মহাল রয়েছে। এসব বালু মহাল থেকে আমরা বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকি। একইসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক যে নদী খনন হয়, সেখান থেকে বালি বিক্রি করেও কিন্তু বিপুল অংকের রাজস্ব আয় হয়। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শ্রমিক, ব্যবসায়ী, নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন ব্যবসা। এ কারণে নদীকেন্দ্রিক বালু শিল্পে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।’

Back to top button