বৃদ্ধা মাকে বাসে তুলে দিয়ে ছেলে বলেছে, ‘তুমি আর বাড়িতে আসার চেষ্টা করবে না’

দিনাজপুর সংবাদদাতা: দিন দশেক হলো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের সিপি সড়ক এলাকার একটি বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন শাকিলা বেগম নামের এক নারী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর দেখে ধারণা করা যায় তার বয়স ৮০ পেরিয়েছে। ঠিকানা না—জানা এই বৃদ্ধা বলছেন, তিনি ঢাকায় ছেলের বাসায় থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাকে বাসে তুলে দিয়ে ছেলে বলেছে, ‘তুমি আর কখনো বাড়িতে আসার চেষ্টা করবে না।’

শাকিলা বেগমকে উদ্ধার করে গতকাল শনিবার রাতে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তার পরিবারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

হিলি সিপি সড়ক এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ১৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ওই বৃদ্ধা তার বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। তার নাম—ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেছেন। তিনি ঢাকা শহরে থাকতেন। নিজের ও ছেলের নাম ছাড়া আর কিছু বলতে পারেননি। তার কথার মধ্যে অনেকটা উর্দুভাষী টান রয়েছে। তিনি মাঝেমধ্যে পাশের দোকান থেকে পুরি ও রুটি সংগ্রহ করে খাচ্ছেন। অন্যের দেওয়া টাকা বা খাবার নিচ্ছেন না। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা বললে তিনি বলছেন, বাড়িতে গেলে ছেলে ও ছেলের বউ আবারও বাড়ি থেকে বের করে দেবে।

শাকিলা বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। ছেলের বাসা ঢাকা শহরে। সেখানেই থাকতেন। তবে ছেলের বাসা ঢাকা শহরের কোথায়, সেটি তিনি বলতে পারছেন না। স্বামীর নামও বলতে পারছেন না। তার একমাত্র ছেলে জামিল হোসেন। ছেলের চার মেয়ে। তাদের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে।

ছেলে ও ছেলের বউ বাড়িতে প্রায়ই মানসিক নির্যাতন করতেন অভিযোগ করে শাকিলা বলেন, কয়েক দিন আগে ছেলে ও ছেলের বউ একটি ব্যাগের মধ্যে পরনের কিছু কাপড়চোপড় ভরে তার হাতে দিয়ে শহর থেকে একটি বাসে তুলে দেন। বাসে তুলে দেওয়ার সময় ছেলে তাকে বলেছে, ‘তুমি আর কখনোই বাড়িতে আসার চেষ্টা করবে না। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যাও।’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘বাসে তুলে দেওয়ার পর আমি ও বাসের হেল্পার ছেলের কাছে মোবাইল নম্বর চাইছিলাম। সে তার মোবাইল নম্বর দেয়নি। বাসের ড্রাইভার আমাকে এখানে নামাইয়ে দিছে।’

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া বলেন, ঢাকা থেকে আসা ঠিকানাবিহীন শাকিলা বেগম নামের ওই নারীকে চিকিৎসার জন্য হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তার পরিবারের ঠিকানা জানার চেষ্টা চলছে। পরিবারকে খুঁজে পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।