মেহেরপুরে গমের বাম্পার ফলন

মেহেরপুর: অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার মেহেরপুরে গমের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। অথচ আগের বছর ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের কারণে খোদ কৃষি অফিস গম আবাদের ব্যাপারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছিল। কৃষি অফিসের ভুল পরামর্শ শুনে গম আবাদের পরিবর্তে অনেকে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে করেছিলেন তামাকের চাষ। কিন্তু ভালো ফলন দেখে তারা এখন কেবল আক্ষেপই করছেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিরুৎসাহিত করার পরও জেলার তিন হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। যদিও গতবারের মতো এবারও গমখেতে ছত্রাক জনিত ব্লাস্ট রোগ হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ঝুঁকি নিয়েও যারা এবার গম চাষ করেছেন তারা আশাতীত ভালো ফলন পেয়ে এখন বড়ই খুশি।

এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে গম কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রবি মৌসুমে জেলায় তিন হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় দুই হাজর ১৮০ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় এক হাজর ৩৫০ হেক্টর এবং মুজিবনগর ২৬০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।

বাওট গ্রামের গমচাষী আসাদুজ্জামান বলেন, এবার আমি এক বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। তাতে ফলন হয়েছে ১৮ মণ। আমি এরই মধ্যে জমি থেকে গম কেটে মাড়াই করেছি। আগের বছরে একই জমিতে ফলন পেয়েছিলাম মাত্র ১৩ মণ।

একই গ্রামের কবির হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে এবছর ফলন পেয়েছি ৩৭ মণ।

সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের কৃষক রিয়াজতুল্লাহ, সানোয়ার হোসেন ও জুব্বার আলী জানান, উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি গম-২৫ চাষ করেছেন তারা। গমচাষের শুরু থেকেই ব্লাস্ট নামের ছত্রাক জনিত রোগটির বিষয়ে এবার যথেষ্ট সজাগ ছিলেন তারা। তাই সময়মত জমির পরিচর্যা করাসহ ব্লাস্ট ছত্রাক থেকে বাঁচতে বালাইনাশক স্প্রে করেছিলেন তারা। তাই ফলনও পেয়েছেন আশাতীত ভালো।

মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের কৃষক রেজাউল হক, আলমাস আলীও জানান, চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ বারণ করার পরেও জমিতে তারা বারি-২৬ জাতের গম চাষ করেছেন। মাঠে ফসলের অবস্থা ভাল। চাষকৃত জমিতে একর প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ মণ গম পাওয়ার আশা করছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি) এসএম মোস্তাফিজুর রহমান  জানান, গত বছর মেহেরপুরসহ দেশের ৭টি জেলার গমখেতে ব্লাস্ট নামক ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গমের দানা পরিপূর্ণ না হয়ে চিটা দেখা দেয়েছিল। একারণে এবছরও জেলায় গমখেতগুলোতে এ রোগের আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। একারণে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের গম চাষ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ উপেক্ষা করে যেসব কৃষক গম চাষ করেছেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সময়মত গমখেতে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ওষুধ স্পে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তাই জেলার গমখেতগুলোতে এবার ছত্রাকের প্রকোপ দেখা যায়নি। গমের দানাও বেশ ভালো হয়েছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এবছর জেলায় মাত্র ১৬ হেক্টর জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে।শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।শতাব্দী, প্রদীপ, বারী ২৬, ২৮ ও কিছু বারী ৩০ জাতের গম চাষ হয়েছে জেলায়।

সুত্রঃ বাংলানিউজ