পার্বত্য চট্রগ্রাম

সব স্থাপনা থেকে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ

Image result for ত্রিদিব রায় সড়ক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রয়াত চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম সকল স্থাপনা থেকে ৯০ দিনের মধ্যে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ আহমেদ, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে পার্বত্য চট্রগ্রামের বদিউজ্জামান সওদাগর ও হেলাল উদ্দিন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন।

ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত সোমবার আদেশ দিয়েছেন।

১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রতিই তিনি আনুগত্য বজায় রেখেছেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত সে দেশের মন্ত্রীর মর্যাদায় অধিভুক্ত ছিলেন তিনি। এবং রাজা ত্রিদিব রায় একজন যুদ্ধাপরাধী। আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতায় এবং স্বাধীনের পরও স্বীকৃতির বিরুদ্ধে তৎপরতা চালিয়েছেন তিনি।

রাজা ত্রিদিব রায় গোষ্ঠী প্রধান হওয়ায় তার সিদ্ধান্তে চাকমারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা । এপ্রিলের মাঝামাঝি, নির্দিষ্ট করে বললে ১৬ তারিখ রাঙ্গামাটিতে পাকিস্তান থার্ড কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান অবস্থান নেয়। স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট কমান্ডোদের প্রধান মেজর জহির আলম খান (২৬ মার্চ রাতে যিনি শেখ মুজিবকে গ্রেফতারে নেতৃত্ব দেন) ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে দেখা করে সবধরণের সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পান। শুধু প্রতিশ্রুতিই নয় ত্রিদিব রায়ের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দলই নয়, রাঙামাটিতে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (ইপিসিএএফ) প্রাথমিকভাবে যোগ দেয় প্রায় শ’তিনেক চাকমা।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জামাল উদ্দিন ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’ বইয়ের ৩৭৯-৩৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন ‘অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাক দালাল খ্যাত চিহ্নিত এক উপজাতীয় নেতার (রাজা ত্রিদিব রায়) বিশ্বাসঘাতকতায় ওই দিনই পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রাঙ্গামাটিতে এসে চুপিসারে অবস্থান নেয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। ভারত প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি পৌঁছার সাথে সাথে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ফেলে।

এ দলে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাঙ্গামাটির আবদুল শুক্কুর, এসএম কামাল, শফিকুর রহমান, ইফতেখার, ইলিয়াস, আবদুল বারী, মো. মামুন ও আবুল কালাম আজাদ। ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র আবুল কালাম আজাদ ও ফুড ইন্সপেক্টর আবদুল বারী ছাড়া অন্যদের পাকবাহিনী নির্মমভাবে অত্যাচার চালিয়ে মানিকছড়িতে নিয়ে হত্যা করে।’

মুক্তিযুদ্ধের প্রায় অনেকখানি সময়ই ত্রিদিব রায় পার্বত্য অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে তার ক্যাম্পেইনিং চালিয়ে গেছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলে দলে চাকমা যুবকেরা ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সে ভর্তি হতে শুরু করে। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বের হওয়া হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র-৯ম খন্ড’ ৯৩ পৃষ্ঠায় মীর শওকত আলীর (বীর উত্তম) উদ্ধৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘চাকমা উপজাতিদের সাহায্য হয়ত আমরা পেতাম। কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায়ের বিরোধিতার জন্য তারা আমাদের বিপক্ষে চলে যায়।’

পার্বত্য চট্রগ্রামের বদিউজ্জামান সওদাগর ও হেলাল উদ্দিন হাইকোর্টে রিটের প্রেক্ষিতে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলার আদেশ দিলেন।

Back to top button