দার্জিলিংয়ে ভাষার আন্দোলনে উত্তপ্ত পাহাড়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতে রাজ্য মন্ত্রীসভার এক বৈঠকের সময় গোর্খাদের এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বৃহস্পতিবার চরম সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সে সময় বেশ কয়েকটি পুলিশ এবং সরকারি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
তাদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের ৫২ জন কর্মী জখম হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চার্জ ও প্রচুর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে।
সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।
প্রায় ৪৫ বছর পরে দার্জিলিংয়ে রাজ্য মন্ত্রীসভার ঐ বৈঠক হচ্ছিল।
গোটা পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতে বাংলা ভাষা পড়াতে হবে বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
এর বিরুদ্ধে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ জানাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রীসভার বৈঠক চলাকালীনই গোর্খাদের একটা অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল।
যদিও সরকার এটা নির্দিষ্ট করে বলেছে যে পাহাড়ের ক্ষেত্রে বাংলা ঐচ্ছিক বিষয় থাকবে, তবুও সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই পাহাড় উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল কিছুদিন থেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ওই বিক্ষোভ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎই পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়া শুরু হয়।
সেখানেই সংবাদ সংগ্রহের কাজে উপস্থিত ছিলেন হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক প্রমোদ গিরি।
সে বলছিলেন, “আমরা যখন রাজভবন থেকে ক্যাবিনেট মিটিং, তার প্রেস কনফারেন্স কভার করে হেঁটে ভানুভবনের দিকে চলে এসেছিলাম। সেখানেই বিক্ষোভ চলছিল। আমরা ভেতরে ঢুকেছিলাম মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে। তখনই, তিনটে নাগাদ ওই বিক্ষোভেই মমতা ব্যানার্জীর কুশ-পুতুল পোড়ানো হচ্ছিল।”
“হঠাৎই কেউ কেউ পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশ প্রথম ১৫-২০ মিনিট কিছুই করে নি, তারা একটু পিছু হঠে গিয়েছিল। কিন্তু পাথর ছোঁড়া বাড়তে থাকায় প্রথমে লাঠি চার্জ করে, তারপরে প্রচুর টিয়ার গ্যাস শেল ফাটায়। পুলিশের গাড়ি, সরকারি বাসগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। গোটা ঘটনা চলেছে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক।”
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্ব জানিয়েছে, তাদের বদনাম করার জন্য কেউ পাথর ছুঁড়েছে পুলিশের দিকে, তাদের কোনও কর্মী সমর্থক ওই কাজ করেন নি। শুক্রবার ১২ ঘনটার পাহাড় বন্ধের ডাক দিয়েছে জনমুক্তি মোর্চা।
ওই সহিংসতায় উত্তরবঙ্গ ও দার্জিলিং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৫২ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে।
বিকেল থেকেই ছয় কোম্পানি কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী আর সন্ধ্যায় এক কোম্পানি সেনা নামানো হয়েছে, যারা বিভিন্ন রাস্তায় টহল দিচ্ছে।
এদিকে ভরা পর্যটন মরসুমে অশান্তির ফলে দার্জিলিঙে আটকিয়ে পড়েছেন হাজার দশেক পর্যটক।
সরকার চেষ্টা করছে যারা পাহাড় থেকে নেমে আসতে চান, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে।
মমতা ব্যানার্জি গত ছ’বছর ধরেই চেষ্টা করছেন এটা প্রমাণ করতে যে দার্জিলিং পাহাড় পশ্চিমবঙ্গেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
তাই তিনি নিয়মিত পাহাড়ে সফর যেমন করেন।
পাহাড়ি জনজাতিগুলির জন্য অনেকগুলি পৃথক উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করে গোর্খা স্বশাসিত পর্ষদকে এড়িয়ে সরাসরি সরকারি সাহায্য পৌঁছিয়ে দিচ্ছিলেন।
গত মাসের পাহাড়ে পৌর নির্বাচনে বহু বছর পরে এই প্রথমবার সমতলের কোনও দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস একটি পুরসভায় জয়ী হয়েছে, অন্যগুলোতেও বেশ কিছু আসন পেয়েছে, এইসব দেখেই গোর্খা নেতারা কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছেন জনসমর্থন খোয়ানোর ভয়ে।
তাই আবারও তারা পৃথক গোর্খাল্যান্ডের ইস্যু বা বাংলা ভাষার পড়ানোর বিরোধিতা করছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
সূত্র: বিবিসি