পার্বত্য চট্রগ্রাম

ফেনী নদীর ভাঙ্গন রোধে একশ কোটি টাকা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

Image result for ফেনী নদী

খাগড়াছড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমা রেখা ফেনী নদীর ভাঙ্গন রোধে প্রায় একশ কোটি টাকার নদী শাসন প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।
গত ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির(একনেক) বৈঠকে সীমান্ত তীর সংরক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্প -২ নামে ৭ হাজার ১০১ মিটার দীর্ঘ এ প্রকল্প তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ১৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটিরাঙা সীমান্তের অযোধ্যা বিওপি এলাকায় ৪শ মিটার, দেওয়ানবাজার এলাকায় ১৮১ মিটার, রামগড়ের মন্দিরঘাট এলাকায় ৪১০ মিটার ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আন্দারমানিক বিওপি এলাকায় ২০০ মিটারসহ ১১৯১। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটিরাঙার লক্ষ্মীছড়া এলাকায় ৫শ মিটার, শান্তিপুর এলাকায় ৪০০ মিটার, আমতলী এলাকায় ২৫০ মিটার, করল্যাছড়ি এলাকায় ২৫০ মিটার, তাইন্দং-এ ৩০০মিটার, রামগড়ের বল্টরাম টিলা এলাকায় ৩০০মিটার, লাচারীপাড়া(কলসিমুখ) এলাকায় ৩০০ মিটির, মহামনি এলাকায় ৪০০ মিটার ও কাশিবাড়ী এলাকায় ৩০০টিমারসহ ২ হাজার ৭০০ মিটার এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ১৭ কোটি মাটিরাঙার অযোধ্যা বিওপি এলাকায় ৪০০ মিটার, করল্যাছড়ি এলাকায় ১১৫০ মিটার, দেওয়ানবাজার বিওপি এলাকায় ৩৫০ মিটার, ফটিকছড়ির পানুয়া এলাকায় ৫০০ মিটার ও আন্দারমানি বিওপি এলকায় ২১০ মিটারসহ ২ হাজার ৬১০ মিটার।

খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল আবছার আজাদ জানান, প্রায় একশ কোটি ৯৩ লাখ টাকার ফেনী নদী শাসন প্রকল্পের কাজ চলতি অর্থ বছরের শুস্ক মৌসুমে শুরু হবে। তিন ধাপে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফেনী নদীর ভাঙ্গন থেকে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খণ্ড রক্ষা পাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সম্প্রতি প্রবল বর্ষণে ফেনী নদীর ভাঙ্গনে মাটিরাঙা সীমান্ত এলাকায় গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দুই দেশের সীমানা পিলার ও ফসলী জমি। কোথাও কোথাও নদীর গতি পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খণ্ড চলে গেছে ভারতের অভ্যন্তরে। বিজিবি ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করলেও তা কোন কাজে আসছে না। ফলে কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড।
খাগড়াছড়ি জেলার পাশ দিয়ে প্রবাহমান এ ফেনী নদীটি বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমার রেখা। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার আমতলী বিওপি এলাকায় এ সীমানা পিলারের অন্তত ২০ ফিট পিছনে ছিল দুই দেশের সীমা রেখা ফেনী নদী। কিন্তু নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ফেনী নদী গতি পরিবর্তন হয়ে এখন প্রায় ৫শ গজ বাংলাদেশের ভিতরে চলে এসেছে। একইভাবে ফেনী নদীর ভাঙ্গনে পলাশপুর বিজিবির আওতাধীন দেওয়ানবাজার ও অযোধ্যা সীমান্ত এলাকায়ও বাংলাদেশ অংশের বহু সীমান্ত পিলার ও ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর ভারতের অংশে জেগে উঠছে নতুন নতুন চর।

শুধু চলতি বর্ষা মৌসুমে মাটিরাঙা উপজেলার অন্তত এক কিলোমিটার ভূমি নদী ভাঙ্গণে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভারত সিসি ব্লক ফেলে নদী শাসন করলেও বাংলাদেশের পক্ষে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় নদী ভাঙ্গণ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। শুধু চলতি মৌসুমে অন্তত এক কিলোমিটার বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন রোধে বিজিবি’র চেষ্টাও কোন কাজে আসছে না।
স্থানীয় কৃষক মো. শাহ এমরান জানান, ফেনীছড়া নদীর ভাঙ্গনের ফলে দিন দিন বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডসহ ফসলী জমি নদীতে তলীয়ে যাচ্ছে। এতে করে তাদের অনেক কষ্টের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কৃষক কমল বিকাশ চাকমা জানান, ফেনী নদীর ভাঙ্গনে তার ফসলসহ প্রায় চার একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
মাটিরাঙা বর্ণাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ফেনী নদীর ভাঙ্গনে চলতি বছরেই স্থানীয় কৃষকের প্রায় সাড়ে তিন একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

মাটিরাঙার ৪০ পলাশপুর বিজিবির কমান্ডনিং অফিসার লে. কর্ণেল মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ পিএসসি জানান, ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ফেনী নদী বাংলাদেশের অনেক ভেতরে চলে এসেছে। ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খণ্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি জানান, বিজিবি সদস্যদের ভাঙ্গন রোধের চেষ্টার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে ফেনী নদীর ভাঙ্গনে বাংলাদেশের বিশাল ভূ-খণ্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিজিবির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
শুধু মাটিরাঙায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নয়, খাগড়াছড়ির অভ্যন্তরের অপর দুই নদী চেঙ্গী ও মাইনী ভাঙ্গণেও নদীর দুই পাড়ের অনেক এলাকার বাড়িঘর, ফসলী জমি ও সরকারি স্থাপনা। বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার।

Back to top button