স্বাস্থ্য

১৫৭ দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ১৫৭টি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। সবচেয়ে বেশি ওষুধ রফতানি হচ্ছে মিয়ানমারে। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশের ওষুধ। যে কারণে রফতানির পরিমাণও বাড়ছে। অবশ্য স্বাধীনতার পর বিদেশ থেকে অধিকাংশ ওষুধ আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হতো। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭১৪ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি খাতে আয় হয়। আরও বিগত ছয় বছরে অর্থাৎ ২০১১-২০১৭ অর্থবছর পর্যন্ত মোট রফতানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। ওষুধ রফতানিকারকরা মনে করছেন এ রফতানি আয় তুলনামূলক কম। রফতানির পরিমাণ ও দেশের সংখ্যা আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশা করছেন। সম্প্রতি এক সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রতিনিয়ত দেশে ওষুধ রফতানি বাড়ছে। স্বাধীনতার পর দেশে অনেক ওষুধ আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ ওষুধ আমদানি করা হচ্ছে; যা ভবিষ্যতে দেশের তৈরি ওষুধ চাহিদা মেটাবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একে লুতফুল কবির যুগান্তরকে বলেন, এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষের চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ ওষুধ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমান সরকারও দেশের ওষুধ শিল্প বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আরও উদ্যোগী হতে হবে।

ওষুধ শিল্প মালিকদের মতে, বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বের ছাড়ের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও ওষুধ শিল্প বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ।

Image result for drugs

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ওষুধ রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৩৮৬ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮ কোটি টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫৪ কোটি টাকা। এর পর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ কিছুটা কমে হয় ৫৪১ কোটি টাকা। এর পর আবার রফতানি আয়ে পরিমাণ আবার বাড়তে থাকে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আয় হয় ৬৫৭ কোটি টাকা ও ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করে আয় করে ৭১৪ কোটি টাকা।

এদিকে ওষুধ শিল্প সমিতি বলছে, রফতানি আরও বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রফতানির অনুমোদন পেয়েছে। ফলে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রফতানির দরজা খুলছে। এখন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব কারখানায় ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে উৎপাদনও অনেকগুণ বেড়েছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এবং দক্ষ ফার্মাসিস্টদের সহায়তায় বর্তমানে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের ওষুধও দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। ওষুধ শিল্প সমিতির সূত্রে জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানির পরিমাণ ক্রমে বাড়ছে। স্বল্প দামে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ সরবরাহের সক্ষমতাই এ দেশের ওষুধ শিল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি। বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ওষুধ উৎপাদন করছে। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে ওষুধ শিল্প দেশের রফতানিমুখী শিল্পের শীর্ষে অবস্থান করবে। তাই রফতানি আয় বাড়াতে সরকারের আরও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমানে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। তারা নানা ধরনের এক্সপোর্ট বেনিফিট পাচ্ছে। আমাদের এ ধরনের সুবিধা দিলে ভারতকে ছাড়িয়ে যেতে সময় লাগবে না।

বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৫৩টি কোম্পানির তৈরিকৃত ওষুধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, ইতালি, কানাডা, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, মরক্কো, আলজেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা যাচ্ছে।

Back to top button