আন্তর্জাতিক

জেএনইউ উত্তেজনায় উত্তাল ভারত, বিপাকে বিজেপি

1.4
নয়া দিল্লি: হিতে বিপরীত হয়ে গেল কি, ভাবতে হচ্ছে বিজেপিকে। জেএনইউ-তে আফজল গুরুর নামে যে স্লোগান উঠেছিল। তাকে চাপা দিতে গিয়ে কি দেশ জুড়ে কানহাইয়া কুমারের নামে স্লোগান তোলার সুযোগ করে দেওয়া হলো? শাসক দলের অন্দরে এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে জেএনইউ-এর কয়েক হাজার ছাত্র ও শিক্ষকের ঢল নামে রাজপথে। মান্ডি হাউস থেকে যন্তর মন্তর, মিছিল আওয়াজ তুলল- কানহাইয়া বধ করেগা কংস কা… জেএনইউ তো বাহানা হ্যায়…রোহিত কি হত্যা কো ছিপানা হ্যায়..!

পাটনা, চেন্নাই, বডোদরা, গৌহাটি, কলকাতা- সর্বত্র বিক্ষোভ-সমাবেশ-মিছিলে এখন একটাই নাম। কানহাইয়া কুমার। ব্রিটেন থেকে মার্কিন মুলুক, নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাড়িয়ে দিচ্ছে হাত। বলছে, জেএনইউ-এর পাশে দাঁড়াও! বেগুসরাইয়ের গ্রামে কানহাইয়ার বাড়িতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কানহাইয়ার বাবা হাতজোড় করে বলেছেন, ‘‘আমাদের নিরাপত্তা লাগবে না। গোটা গ্রাম পাশে আছে। পারেন তো আমার ছেলেটাকে নিরাপত্তা দিন!’’ আগের দিন আদালত চত্বরে পুলিশের সামনেই মার খেয়েছিলেন কানহাইয়া। তার মা আজ প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আমার ছেলেটাকে জাতির জন্য বিপজ্জনক বলে দেগে দিল যারা, তারা ওকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারছে না কেন?’’
বিজেপির দলীয় নেতৃত্ব বা কেন্দ্রীয় সরকার, কেউই কিন্তু ঠিক এই অবস্থাটা চাননি। তারা বুঝতে পারছেন, জেএনইউ নিয়ে জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে যে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার সুযোগ ছিল, তা ধীরে ধীরে ব্যুমেরাং হতে শুরু করেছে। জনমতের চাপে আজ খোদ জেএনইউ-এ বিজেপির ছাত্র সংগঠনের তিন নেতা পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বসেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহী শক্তির সমালোচনা করেও এই নেতারা ছাত্রদের উপর সরকারের দমন নীতির বিরোধিতা করেছেন। এই তিন নেতার এক জন প্রদীপ নারওয়াল বলেন, ‘‘কানহাইয়া এখন এক জন অভিযুক্ত। তাকে যদি আজীবন কারাবাসের রায়ও দেয় আদালত, আমাদের সংস্কৃতি তালেবানি হলে চলবে না।’’ এ সব শুনে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছেন এবিভিপি নেতৃত্ব। তারা বলছেন, তিন ছাত্রনেতার ইস্তফা এখনও তাদের হাতে আসেনি। আর যদি ওই তিন জন ইস্তফা দিয়েও থাকেন, এবিভিপি-র দাবি, সেটা জেএনইউ-তে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপের ফল। বিশ্ববিদ্যালয়ে একঘরে হয়ে গিয়ে ওরা নাকি ভয়ে ভয়ে ইস্তফা দিয়েছেন!

ভয়ই হোক বা ভক্তি, অস্বস্তিটা তো চাপা পড়ছে না। কানহাইয়াকে নিম্ন আদালত ২ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছিল। আজ কানহাইয়ার হয়ে আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন। কাল তার শুনানি। দিল্লি পুলিশ জামিনের বিরোধিতা করবে না বলেই ঠিক করেছে। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের অধীনে থাকা গোয়েন্দা সংস্থা যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে কানহাইয়া কুমারের উল্লেখ মাত্র নেই। ফলে সরকারকে এখন পিছু হঠতেই হচ্ছে।

দিল্লির বিজেপি বিধায়ক ও পি শর্মাকে ক’দিন আগে আদালত চত্বরে মারমুখী চেহারায় দেখা গিয়েছিল। পুলিশ তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্রেফতারও করা হয়। পরে জামিনে ছাড়া পান তিনি। গত কাল বিক্রম চৌহান নামে যে আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত চত্বরে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল, তিনি এখনও অধরা। বরং দিল্লির কারকারডুমা আদালতে আইনজীবী সঙ্গীরা তাকে রীতিমতো সম্বর্ধনা দেন। – সংবাদমাধ্যম

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button