আইন-আদালতআন্তর্জাতিকজাতীয়রাজনীতি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হুজি মাও তাজউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ চমৎকার কিন্তু হাজার হাজার বাঙ্গালী হত্যাকারী, নিকৃষ্ট ধর্ষক বাচ্চু রাজাকারকে ধরে এনে ফাঁসি কার্যকর করার কোন পদক্ষেপ নেই

বামে পলাতক ওহাবী মাও তাজউদ্দিন, মাঝে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ট্রাজেডি, ডানে পলাতক বাচ্চু রাজাকার

download (1) images (1)

বামে পলাতক ওহাবী মাও তাজউদ্দিন, উপরে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ট্রাজেডি, ডানে পলাতক বাচ্চু রাজাকার। এদর ফাঁসি কবে হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেড় বছর আগেই বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় পলাতক আসামি মাও তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। এখন তাঁকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বাচ্চু রাজাকারকে ধরে আনার কোন উদ্যোগ নেই।
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ নিশ্চিত করে যে মাও তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা না হলেও তারা তাঁকে নজরদারিতে রেখেছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে বহিঃসমর্পণের প্রস্তাব পাঠাতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তাজউদ্দিনকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করার দৃশ্যমান তৎপরতা আগে দেখা যায়নি। অবশ্য এখন তাঁকে ফেরাতে নানা তথ্য জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ২২ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় এ হামলা চালানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পলাতক তাজউদ্দিন নাম পাল্টিয়ে এবং অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন বলে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তাজউদ্দিনকে বাংলাদেশ বিমানের করাচিগামী একটি উড়োজাহাজে তুলে দেওয়া হয়। পরে সে পাকিস্তান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

আর কুখ্যাত রাজাকার গণধর্ষক আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার তার ফাঁসির রায শুনার সাথে সাথে পলাতক হয়েছে। তাকে ধরতে পারেনি সরকার। যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রথম যে রায়ে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে সেই আদেশ বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ এখনও তেমনভাবে কেন গৃহীত হচ্ছেনা তা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইন্টারপোল কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তরকে জানিয়েছে, বাদল নামে ভুয়া পাসপোর্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে মাও তাজউদ্দিন। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বাংলাদেশের পুলিশকে এ বিষয়টি জানায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টারপোল শাখা কার্যালয়। পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায় পুলিশ।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার উপমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। সে সময় দেশটির উপমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ আবেদন করলে তাঁরা এই আসামিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ।
আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তাজউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার একটি প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে এ প্রস্তাব দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে ওই দেশের সরকারের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তাজউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার, আমরা করব।’
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কুশীলবদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মাওলানা তাজউদ্দিন। তিনি হুজি-বি নেতা মুফতি হান্নানকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন। হামলার আগে তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু তাঁর সরকারি বাসায় হুজি-বি নেতা মুফতি হান্নান, হাফেজ আবু তাহের ও তাজউদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছিলেন। পিন্টু ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন।
মাও তাজউদ্দিন ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসা ও মোহাম্মদপুরে বিতর্কিত ইসলামী রাজনীতিক  আজিজুল হকের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। পরে পাকিস্তানে চলে যায়। পাকিস্তানে পড়াশোনা শেষ করে ২০০১ সালে দেশে ফেরে এবং এ দেশে হুজি-বির কার্যক্রমে যুক্ত হন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কতিপয় কর্মকর্তা ভুয়া পাসপোর্টে তাজউদ্দিনকে এ দেশ থেকে পাকিস্তানগামী বিমানে তুলে দেন। ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন দুজন কর্মকর্তা আদালতে জবানবন্দি দিয়ে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পলাতক তাজউদ্দিনকে আটক করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল বিশ্বব্যাপী রেড নোটিশ জারি করে। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টারপোল (প্রিটোরিয়া এনসিবি) শাখা এক চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশকে জানায়, তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় নজরদারিতে আছেন। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করতে বাংলাদেশ আগ্রহ প্রকাশ করে। এতে দেশটির সরকার রাজি হয়। এরপরই চুক্তির খসড়া পাঠানো হয় বাংলাদেশ সরকারের কাছে। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বহিঃসমর্পণের আওতায় তাজউদ্দিনকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button