স্বাস্থ্য

সফটওয়্যার দিবে হার্ট অ্যাটাকের আগাম খবর

মনে করুন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে যাচ্ছেন, আর বেশ আগেই সেটি জানিয়ে দেয়া হলো। চিকিৎসকরা দ্রুত ব্যবস্থাও নিলেন।

অনেকটা কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও, এখন সেটি সম্ভব হতে চলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দপ্তর এ রকম একটি সফটওয়্যারের অনুমোদন দিয়েছেন, যেটি হৃদপিণ্ড বা ফুসফুসের হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে আগাম সতর্ক বার্তা দিতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এই ব্যবস্থা চালু করেছে।

এটা আসলে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা একজন রোগীর শারীরিক লক্ষণ যাচাই বাচাই করে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়ার অন্তত ছয় ঘণ্টা আগে সংকেত দিতে পারে। ফলে চিকিৎসক এবং সেবিকারা তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

”স্বাস্থ্য সেবা বিভাগগুলো এখন একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে- মানুষ আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচেন, কিন্তু তারা এখন অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীদের নজরদারিতে রাখা হলেও চিকিৎসক বা সেবিকারা তখনি সেবা দিতে পারেন, যখন কেউ ভয়াবহ কোন ঘটনার শিকার হন। আগে তাদের সেটি বুঝতে পারা সম্ভব নয়।” বলছেন এক্সেল মেডিকেল সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক ল্যান্স বার্টন, যার কোম্পানি এই সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে।

বাস্তবতা হলো, অনেক হাসপাতালেই রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক বা কর্মী থাকে না। এমনকি একজন রোগীর সব তথ্য যাচাই বাছাই করাও হয়তো তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।

আর এই সমস্যারই সমাধান দেবে ওয়েভ ক্লিনিক্যাল প্লাটফর্ম নামের এই সফটওয়্যার। সেটি রোগীর বিভিন্ন তথ্য যাচাই বাছাই এবং শারীরিক অবস্থা, ধরণ পর্যালোচনা করবে, যা হয়তো মানুষের সাধারণ চোখে ধরা পড়ে না।

নির্মাতারা বলছেন, এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা বিশেষ কোন যন্ত্রপাতির দরকার হবে না। হাসপাতালে এখন যে নজরদারি ব্যবস্থাগুলো চালু রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করেই নতুন এই প্রযুক্তি কাজ করবে।

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, চিকিৎসার ভুলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রেই অন্তত ১০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। যা দেশটির মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বড় কারণ।

এখন ওয়েব সফটওয়্যার নির্মাতারা আশা করছেন, এর মাধ্যমে বছরে এ ধরণের অন্তত আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে।

নির্মাতারা বলছেন, এটি ব্যবহারের জন্য আলাদা বিশেষ কোন যন্ত্রপাতির দরকার হবে না। হাসপাতালে এখন যে নজরদারি ব্যবস্থাগুলো চালু রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করেই নতুন এই প্রযুক্তি কাজ করবে।

সফটওয়্যারটি হার্ট বিট, ফুসফুসের শ্বাস নেয়ার ধরণ, রক্তের চাপ, শরীরের তাপমাত্রা আর অক্সিজেনের মাত্রা যাচাই করবে। এসব তথ্য স্বাস্থ্য কর্মীরা তাদের ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারেও দেখতে পারবেন। ফলে বিছানার পাশে না এসেও, তারা যেকোনো স্থানে বসে রোগীর উপর নজরদারি করতে পারবেন।

রোগীদের ০-৫ মাত্রায় নজরদারি করা হবে। কোন রোগীর অবস্থা যদি ৩ এর বেশি হয়ে যায়, তখনি সফটওয়্যারটি সতর্ক বার্তা পাঠাতে শুরু করবে।

তবে ওয়েবের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, এই সফটওয়্যারের অ্যালগোরিদম ব্যবস্থা, যার নামকরণ করা হয়েছে ভিসেনশিয়া সেফটি ইনডেক্স। প্রথমবারের মতো মার্কিন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ ধরণের কোন স্বাস্থ্য সফটওয়্যারের অনুমোদন দিয়েছে।

তবে এর মাধ্যমে সব রোগীকেই যে বাঁচানো যাবে, সেই আশা করছেন না বিজ্ঞানীরা। তারা এখন শুধুমাত্র সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে চাইছেন।

এর মধ্যেই সফটওয়্যারটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং সেখানে আশাতীত সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে

এখনো যদিও এই সফটওয়্যারটি শুধুমাত্র নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোয় ব্যবহার করা সম্ভব।

কিন্তু নির্মাতার চেষ্টা করছেন এটির আরো উন্নতি করার, যাতে সাধারণ মানুষজনের হাতেও পৌঁছে দেয়া যায়।

হৃদপিণ্ড বা ফুসফুসের বাইরে অন্যান্য রোগও যাতে এটির মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়, সেই চেষ্টাও করছেন নির্মাতারা। ।

বিবিসি

Back to top button