ব্লগার নয়ন চ্যাটার্জীর ভাবনা: “বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতি সংশোধন হবে কবে ?”

অনলাইন জগতে সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা খুব জনপ্রিয় তেমন একজন ব্লগার নয়ন চ্যাটার্জী। চলমান দেশের সংবিধান থেকে যখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেওয়ার মত খবর আসছে তখন তিনি প্রশ্ন রেখেছেন: “বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতি সংশোধন হবে কবে ?”

তাঁর টাইম লাইন থেকে পোস্টটি হুবহু উল্লেখ করা হলো।

বাংলাদেশ সংবিধানের শুরুতেই লেখা আছে-
“আমরা অঙ্গীকার করিতেছি, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উব্ধুদ্ধ করিয়া ছিলো- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে”।

পাঠক ! খেয়াল করুন, সংবিধানের শুরুতে বলা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের নাকি চারটি মতবাদ মুক্তিযুদ্ধ করতে উব্ধুদ্ধ করেছিলো, মতবাদগুলো হলো-
১) জাতীয়তাবাদ
২) সমাজতন্ত্র
৩) গণতন্ত্র
৪) ধর্মনিরপেক্ষতা

এখন যদি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করা হয়,
“আচ্ছা আপনারা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন ? কোন মতবাদ আপনাদেরকে মুক্তিযুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো –
জাতীয়তাবাদ ?
সমাজতন্ত্র ?
গণতন্ত্র ?
নাকি ধর্মনিরপেক্ষতা ?

আমি নিশ্চিত-
বাংলাদেশের সকল মু্ক্তিযোদ্ধা (সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে মতান্তরে ২ লক্ষ) উপরের কোনটাই উত্তর হিসেবে দিবে না। দেবে ভিন্নটা।

কেউ হয়ত বলবে ২৫ মার্চ গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে,
কেউ হয়ত বলবে দেশকে স্বাধীন করতে,
কেউ হয়ত বলবে আমরা অধিকার বঞ্চিত ছিলাম, অধিকার আদায় করতে করেছি,
তবে সবার শেষের অংশটা গিয়ে মিলবে- মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা।

এখানে উল্লেখ্য- সমাজতান্ত্রীক, গণতান্ত্রিক আর ধর্মনিরপেক্ষ লোক আর যাই হোক মাতৃভূমিপ্রেমী নয়। এরা স্বার্থবাদী। স্বার্থ পেলে এরা মাতৃভূমির সাথে বেঈমানী করতে পিছপা হয় না। বাকি থাকে শুধু জাতীয়তাবাদ। তবে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা মানেই কিন্তু জাতীয়তাবাদ নয়। অন্তত বাংলাদেশের জন্য নয়। বাংলাদেশ বা পূর্ব বাংলার জনগণের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি শুধু জাতীয়তাবাদ থেকে নয়, বরং মুসলিম জাতীয়তাবাদ থেকে। কারণ ৪৭-এ পূর্ব বাংলা নামক ‘ভূমি’র সৃষ্টি হয়েছিলো দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে শুধু মুসলমানদের থাকার জন্য। এবং ৭১ সালে ঐ ভূমিখানিকেই মাতৃভূমি মনে করে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন। বলাবাহুল্য, ৪৭ এর দেশভাগের জন্য অগ্রগামী ছিলেন কিন্তু ঐ পূর্ব বাংলার জনগণই।

আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয়, তবে বাংলাদেশজুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গণভোট করা হোক। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করা হোক- আপনি কি চান ? বাংলাদেশের সংবিধানে ভিত্তি মুসলিম বা ইসলামী জাতীয়তাবাদ হোক ?
আমি নিশ্চিত দেশের ৯০-৯৫% মুক্তিযোদ্ধাই গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ ছুড়ে ফেলে মুসলিম বা ইসলামী জাতীয়তাবাদের পক্ষেই রায় দেবে।

বলাবাহুল্য, এখন যেমন অনেক মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে খায়, সংবিধান দেখে বোঝা যায়- ঐ সময়ও এ ধরনের লোকের অভাব ছিলো না। ঐ শ্রেণীর লোকগুলোই মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মিথ্যা কথা বলে ৭২ সালে সংবিধান রচনা করেছিলো, যার ইন্ধনদাতা ছিলো বামপন্থী ও ভারতীয় দালাল গোষ্ঠী। বলাবাহুল্য এখন পর্যন্ত ঐ মিথ্যা সংবিধানের অজুহাত দিয়েই তারা বাংলাদেশের মানুষকে যুলুম নিপীড়ন করে যাচ্ছে।

আমার মনে হয়, অবিলম্বে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে সঠিক মূলনীতি সংযুক্ত করা উচিত। এবং অবশ্যই সেটা হবে ইসলামী বা মুসলিম জাতীয়তাবাদ।

কি ভাবছেন ? সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয় ?
অবশ্যই সম্ভব।
এ সম্পর্কে সংবিধান রচনাকারী ড কামাল হোসেনের বক্তব্য বলতে হয়-
“সংবিধান সংশোধন অবশ্যই করা যায়। কারণ এটা কোন কোরআন ও হাদীস নয়।”