স্বাস্থ্য

দেশে বেকার টেকনোলজিস্টের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার!

Image result for medical technologist
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টবিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরীতে পাঁচ জন টেকনোলজিস্ট থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে টেকনোলজিস্ট রয়েছেন এক জনেরও কম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, গত আট বছর ধরে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতেই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের পদ শূন্য রয়েছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক। বর্তমানে দেশে বেকার টেকনোলজিস্টের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।
অধিদফতরের শর্তাবলীর কারণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীরা টেকনোলজিস্টের পদে আবেদন করতে পারেন না। ফলে টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা জটিলতা। এসব কারণে রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত নয়বছরেও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট-এর শিক্ষা বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই সভায় কারিগরি শিক্ষাবোর্ড স্বাস্থ্যসেবা সর্ম্পকিত কোনও প্রতিষ্ঠান স্থাপন করবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।অভিযোগ আছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড । দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলছে একই ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। আর এতে করে জনস্বাস্থ্য রয়েছে ঝুঁকিতে। নিয়োগসহ নানা বিষয়ে বাড়ছে জটিলতা।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বিষয়টি নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। মামলা থাকায় এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা যাচ্ছে না।যদিও আইনের মাধ্যমে বিষয়টির একটি সমাধান হবে দাবি এই সূত্রের। তবে সূত্রটি স্বীকার করে যে, দেশে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের সংখ্যা অনেক কম। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই এ পদে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) প্রথমে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে। বর্তমানে ঢাকাসহ ৮টি বিভাগীয় ও জেলা শহরে পরিচালিত হচ্ছে ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির কার্যক্রম। অপরদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ২০০২ সাল থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজির কোর্স পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় । এর ফলেই সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক মো. মোহাব্বত হোসেন খান বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো অনেকবার দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি, মামলার রায় হলেই এ বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাবে।’
মোহাব্বত হোসেন খান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের পদ শূন্য হয়ে আছে। ল্যাব-এ প্রয়োজনীয় লোক নেই,। মেডিক্যাল কলেজগুলোতে নির্দিষ্ট বিভাগে যেখানে আট থেকে আট জন শিক্ষক দরকার, সেখানে শিক্ষক আছেন হাতে গোনা দুই থেকে তিন জন। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসক, নার্সদের মতোই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জনশক্তি হলো মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। এই পদ শূন্য থাকা মানে সাধারণ মানুষের রোগ নির্ণয় বাধাগ্রস্ত হওয়া।’ তাই যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির সুরাহা উচিত বলেন মোহাব্বত হোসেন খান।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এ জটিলতার অবসানে আরেকটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও আলোচনা চলছে। এবার এই জটিলতার সমাধান হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button