সামাজিক গণমাধ্যম

ফেসবুকে আসলে কি হতে যাচ্ছে?

Image result for ফেসবুক

যখনই ফেসবুক বিপদে পড়েছে, বাঁচাতে ছুটে চলে এসেছেন এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। কখনো বুদ্ধিতে, কখনো কৌশলে হুমকি হয়ে দাঁড়ানো প্রতিদ্বন্দ্বীদের কিনে নিয়েছেন, নয়তো তাদের মতো ফিচার ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু গত বছর থেকে নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, ভুয়া খবর আর সরকারি চাপ বৃদ্ধিতে ‘বেপথে’ ফেসবুক। এ বছর ফেসবুককে ঠিক করার ব্রত নেওয়ার ঘোষণা দিলেন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রথম কোপটা দিলেন ফেসবুকের বিরোধী ও শত্রু হয়ে ওঠা মিডিয়া ও ব্র্যান্ড পেজগুলোকে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ট্রাফিক টানা বন্ধ। ফেলো কড়ি মাখো তেল! টাকা না দিলে পোস্টে রিচ নেই। ব্র্যান্ড পেজ, সেলিব্রেটি পেজ থাকবে, কিন্তু তা কোনো এক চিপায়। ফেসবুক ব্যবহারকারীর দরকার হলে সেখানে গিয়ে দেখে আসবে। এই ভিডিওর যুগে এখন ব্যক্তিজীবনের ঘটনাগুলো নিউজ ফিডে দেখানো বেশি জরুরি তাঁর কাছে। গবেষণা যতই বলুক না কেন, ফেসবুকে বন্ধুর ভালো খবরের পোস্টে মনে হিংসা জন্মে। তবু ফেসবুকে বন্ধু ও পরিবারের পোস্টগুলোতেই বেশি আদান-প্রদান হয়। ফেসবুকের রি-অ্যাকশন বাটন লাভ, লাইক তো সেখানেই বেশি প্রযোজ্য।

তবে জাকারবার্গের এই উদ্যোগ কি ভালোভাবে নেবে প্রচুর অর্থ খরচ করে লাখো-কোটি লাইক জমানো, ফলোয়ার তৈরি করা ব্র্যান্ডগুলো? তারা ইতিমধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। নিউজ ফিডে পরিবর্তন ঘোষণা দেওয়ার এক দিনের ব্যবধানেই মার্ক জাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ কমেছে ৩৩০ কোটি ডলার, যা তাঁর মোট সম্পদের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। নিউজ ফিডে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেওয়ার পর ফেসবুকের শেয়ারের দাম কমেছে আট ডলারের বেশি। শেয়ারের মূল্যে দরপতন ঘটায় কমেছে বিশ্বের এই পঞ্চম শীর্ষ ধনীর সম্পদের পরিমাণও।

তবে শেয়ারের দর কমলেও ফেসবুকের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছে ওয়ালস্ট্রিট। সেখানকার আর্থিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দীর্ঘ মেয়াদে কোম্পানির জন্য সুফল বয়ে আনবে এ পরিবর্তন। তবে এখনই ফেসবুকের আয় কমবে না বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। অবশ্য ফেসবুক নিউজ ফিডে সংবাদমাধ্যমের পোস্ট কমিয়ে আনতে মার্ক জাকারবার্গের সিদ্ধান্তের পেছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য আছে। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য বড় সুযোগ বলে মনে করেন অনেকেই।

তবে আমাদের দেশের ফেসবুক পেজগুলোর ওপরেও প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু জাকারবার্গ ঠিক করেছেন মিডিয়া, তারকা ও ব্র্যান্ড পেজের কনটেন্ট বেশি দেখাবেন না। তাই এটিকে স্বনির্ভরতার সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। দিন শেষে ফেসবুক একটা ব্যবসা বৈ কিছু নয়! ফেসবুক ভাবছে, অন্তত যাঁরা বিজ্ঞাপন দেবেন না, তাঁদেরটা নিউজ ফিডে দেখাবে না। বেশি দেখাবে বন্ধুদের মধ্যকার আলোচনা। নিউজ ফিডে এ পরিবর্তনে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলো ক্ষতি হবে কি? ক্ষতি তো কিছুটা অবশ্যই হবে। তবে আশার কথা, মিডিয়া ও ব্র্যান্ডগুলোর ফেসবুক নির্ভরতা কমবে। নিজস্ব কনটেন্টের মান ভালো হবে। নিজস্ব ইউজার বাড়বে। পরোক্ষ ট্রাফিক টানা লাগবে না।

ফেসবুক আজ ২০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারীকে একটি প্ল্যাটফর্মে এনেছে। এখন তো তাদের কথাও ভাবতে হবে! ব্যবহারকারীদের কাজে লাগিয়ে যত বেশি আয়, ততই তাদের সুবিধা। তবে গত কয়েক বছরের গতিধারা কিন্তু ফেসবুকের পক্ষে কথা বলে না। তরুণেরা এখন আকর্ষণীয় অন্য প্ল্যাটফর্ম স্ন্যাপচ্যাট, ইনস্টাগ্রামের মতো সাইটে ঢুকছে। যাঁরা পেশাদার, তাঁরা যাচ্ছেন লিংকডইনে। ফেসবুকরে ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপের মতো ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিংয়ে যোগাযোগ হচ্ছে। ফেসবুকে তাহলে তাঁরা কোন আকর্ষণে যাবেন? ফেসবুক নানা ফিচার এনে মানুষকে আটকাতে চাইছে। এখন তো ইউটিউবের মতো ভিডিওর দিকে বেশি মনোযোগ। কারণ, মানুষ ভিডিও দেখছে বেশি। ফেসবুক সে পথেও হাঁটছে। ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে হেন কোনো কাজ নেই, যা তারা করছে না।

জাকারবার্গ বলেছেন, ফেসবুকের ব্যবহারকে সুখকর করে তুলতে নতুন এ পরিবর্তন আনছেন তিনি। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে সাবলীল করে তোলা ফেসবুকের দায়িত্ব তাঁর কাছে। জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা যখন এটা চালু করব, আপনারা নিউজ ফিডে বাণিজ্যিক পণ্য ও সংবাদমাধ্যমের পোস্ট অনেক কম দেখতে পাবেন। এ ছাড়া যেসব সর্বজনীন বিষয় আপনারা পাবেন, তা-ও হবে একই মানের। তা যেন মানুষের মধ্যে অর্থবহ অন্তরঙ্গতা সৃষ্টিতে উৎসাহ জোগায়।’

তাহলে জাকারবার্গ কি ভুল করছেন? উত্তরটা হচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের উৎসাহ ধরে রাখতে পারলে তিনি সফল। তা না হলে ফেসবুক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে মানুষ। তবে জাকারবার্গ নিশ্চয় কাঁচা খেলোয়াড় নন!

Back to top button