অর্থ-বাণিজ্য

১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ সাত দিনে

Image result for ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ সাত দিনে

বিনিয়োগের ছাড়পত্র, কম্পানির নিবন্ধন এবং জমি ক্রয় ও লিজ দলিল সম্পন্ন হবে মাত্র এক দিনেই। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত পাওয়া যাবে মোটে সাত দিনে। ট্রেড লাইসেন্স, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, শুল্ক ও ভ্যাট সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়া যাবে তিন দিনে। প্রকল্প ছাড়পত্র কিংবা জমির নামজারি মিলবে ১৫ দিনে, প্রকল্পের প্রকারভেদে পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে সময় লাগবে সাত দিন থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ দিন।

দেশের ১০০টি প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এভাবে দিন গুনে গুনে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করবে সরকার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব সেবা দিতে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) বিধিমালা, ২০১৮’-এর খসড়া তৈরি করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এটি হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগকারী দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের হয়রানি, খরচ ও সময় বাঁচবে। এসব সেবা পেতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে এখনকার মতো আর ঘুরতে হবে না ব্যবসায়ীদের। ফি পরিশোধের পর অনলাইনে আবেদন করে তার প্রিন্ট কপি কেন্দ্রীয় ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারে জমা দিলেই সময়মতো মিলবে সব সেবা।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে আমরা একটি বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছি। তাতে কোনো সেবা পেতে বিনিয়োগকারীদের কত দিন সময় লাগবে, তাও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকছে। ওই সময়ের মধ্যেই সরকারের সব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের সেবা নিশ্চিত করবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের হয়রানি কমবে, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। শিগগিরই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করে জারি করা হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে গত ফেব্রুয়ারিতে আইন পাস করে সরকার। তাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করতে একটি বিধিমালা প্রণয়নের কথা বলা আছে। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিধিমালার খসড়া তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রায় চূড়ান্ত করেছে।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস কর্তৃপক্ষ থাকবে। আঞ্চলিক পর্যায়েও এ কর্তৃপক্ষের অফিস থাকবে। বিনিয়োগকারী যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়ার পর অনলাইনে আবেদন করে তার একটি কপি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কর্তৃপক্ষের অফিসে জমা দেওয়ার দিন থেকে সেবা পাওয়ার দিনক্ষণ গণনা শুরু হবে। তিন দিনে মিলবে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, কাস্টমসসংক্রান্ত ছাড়পত্র, অগ্নিনিরোধসংক্রান্ত সেবা ও ছাড়পত্র, লাইসেন্স নবায়ন ও সংশোধন, কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ও নমুনা (স্যাম্পল) প্রেরণের অনুমতি। পাঁচ দিনে মিলবে নিবাসী ও অনিবাসী ভিসা।

সাত দিনের মধ্যে যেসব সেবা নিশ্চিত হবে, তার মধ্যে রয়েছে কম্পানির আর্টিক্যালস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদন, শেয়ার ট্রান্সফার অনুমোদন, ব্যাংকঋণের অনাপত্তিপত্র, সাবকন্ট্রাক্ট প্রদানের অনুমতি, অফশোর ব্যাংকিং লাইসেন্সের অনাপত্তিপত্র, সবুজ ক্যাটাগরির প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র, বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস সংযোগ, পানি সংযোগ ও পয়োনিষ্কাশন, বয়লার সার্টিফিকেট, বয়লার নিবন্ধন ও সনদপত্র নবায়ন এবং লভ্যাংশ, রেমিট্যান্স ও মূলধন প্রত্যাবাসন।

আবেদন করার ১৫ দিনের মধ্যে মিলবে ভূমি বা সম্পত্তির নামজারি, বিস্ফোরক লাইসেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিভিন্ন প্রকার প্রণোদনা, বন্ড লাইসেন্স এবং পানি ও বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের অনুমতি। ২১ দিনে পাওয়া যাবে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ওয়ারিংসংক্রান্ত ছাড়পত্র ও জেনারেটর স্থাপনের অনুমতি ও বিদেশি কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট। ২২ দিনে পাওয়া যাবে ‘কমলা ক’ ক্যাটাগরির প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র।

এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল পার্ক ঘোষণার অনুমোদন, নির্মাণ পারমিট, কলকারখানার মেশিন লে আইট প্ল্যান অনুমোদন ও অগ্নিনিরোধসংক্রান্ত সেবা ও ছাড়পত্র পাওয়া যাবে ৩০ দিনের মধ্যে। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশের ভেতরের ব্যবসায়ী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। তাই বিধিমালা জারির পর সে অনুযায়ী যাতে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পায়, তা কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। বর্তমানে বিনিয়োগ পরিবেশে বিশ্বে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭ নম্বরে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবে না।’

Back to top button