অর্থ-বাণিজ্য

বিশ্বে মোবাইল শিল্পের বৃহত্তম বাজারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম

Image result for বিশ্বে মোবাইল শিল্পের বৃহত্তম বাজারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম

রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ বাংলাদেশের মোবাইল ফোন খাতের ওপর তিনটি প্রতিবেদন তুলে ধরে।

তিনটি প্রতিবেদনের একটি ছিল ট্যাক্সেশন বিষয়ে। যেখানে বলা হয়, অত্যাধিক ট্যাক্সের কারণেই অপারেটরদের দিক থেকে যথেষ্ট চেষ্টা থাকার পরও অনেক সময়ই তাদের পক্ষে ভালো সেবা দেয়া সম্ভব হয় না।

কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, মোবাইল ফোন সেবার ওপর এত বেশি ট্যাক্স পাশের কোনো দেশেই নেই। প্রেজেন্টেশানগুলো উপস্থাপন করেন জিএসএমএ-এর অ্যাক্টিং হেড অব এশিয়া প্যাসিফিক ইমানুয়েল লিঞ্চি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের গ্রাহক আয় প্রতি মাসে গড়ে তিন ডলারের কম। তার ওপর স্পেকট্রামের দাম আবার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, গ্রাহকদের গুণগত সেবা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ স্পেকট্রাম প্রয়োজন তার অর্ধেকটাও তা কিনতে পারছে না মূলত দামের কারণে। অনুষ্ঠানে মোবাইল ফোন অপারেটদের সংগঠন অ্যামটবের সাধারণ সম্পাদক টিআইএম নূরুল কবীরসহ অন্যান্য অপারেটরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বে মোবাইল শিল্পের বৃহত্তম বাজারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ অবস্থান পাঁচ।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি ফোরজি ব্যবহারকারীদের সংখ্যা থ্রিজি ব্যবহারকারীদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে সবচেয়ে নিচের দিকে রয়েছে।

জিএসএমএ এমন তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, বাংলাদেশে মাত্র ২১ শতাংশ মানুষের কাছে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ আছে যা এ অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিু। জিএসএমএ ২০১৭ সালের তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে, সেসময় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মোবাইল ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইব করেছেন।

যদিও সেসময় বাংলাদেশ থ্রি-জি নেটওয়ার্কের আওতায় আসে; কিন্তু তারপরও অনুপাত এমনই ছিল। এমনকি নেপাল ও মিয়ানমারের মতো দেশ, যাদের বাংলাদেশের তুলনায় জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন কম, তারাও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে এগিয়ে আছে। সেখানে শতকরা হার ২৮ থেকে ৩৫ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনে অধিকাংশ গ্রাহকই মূলত ফোনকল এবং এসএমএস সার্ভিস ব্যবহার করে থাকেন।

জিএসএমএ তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, জনগণের সামর্থ্যরে বিষয়টি এখানে একটি বড় অন্তরায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। মোবাইল সেক্টরে উচ্চহারে করারোপ ও ফি’র ফলে মোবাইল অপারেটরদের সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সরাসরি খুচরা মূল্য বেড়ে যায় যা ব্যবহারকারীদের ওপর চাপ পড়ে।

এটিও উল্লেখযোগ্য বাধা তৈরি করছে ডিজিটাল অগ্রগতিতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশে মোবাইল সেবার ক্ষেত্রে কর আরোপের ফলে ট্যারিফ ব্যয় প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি (২২ শতাংশ)। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মোবাইল সেবায় করের হার ১০ দশমিক ৪ ডলার ও বিশ্বে ১৪ দশমিক ৬ ডলার, সেখানে বাংলাদেশে এ হার ২ দশমিক ৯ ডলার। জিএসএমএ বলছে, ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার জন্য মোবাইল তরঙ্গ এবং কর সংস্কার প্রয়োজন।

সাশ্রয়ী রেটে মোবাইল সেবাদান, কর ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট তরঙ্গের দাম লক্ষ্য পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সাত বছর পর দেশে মোবাইল ব্যবহারকারী মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ হবে বলে মনে করছেন তারা।

জিএসএমএ বলছে, বর্তমানে দেশের ২১ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। আর ফোরজির বিস্তারের কারণে ২০২৫ সালে এ সংখ্যা আরও ২০ শতাংশ বাড়বে। প্রতিবেদনের একাংশে ইন্টারনেট স্পিডের বেহাল অবস্থাও তুলে বলা হয়, ইন্টারনেট স্পিডের (ডাউনলোড) দিক থেকে নিচের দিকে অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি সবচেয়ে কম অর্থাৎ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ০৮ মেগাবিটস। শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, দেশটিতে ইন্টারনেটের গতি সেকেন্ড প্রতি ১৯ দশমিক ৯ মেগাবিটস। এছাড়া মালয়েশিয়ায় ১৫ দশমিক ৭৮ এমবিপিএস, ভুটানে ১৫ দশমিক ৪৩ এমবিপিএস।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইন্টারনেটের গতি ৮ দশমিক ৯২ এমবিপিএস এবং মিয়ানমারে ১২ দশমিক ৭৬ এমবিপিএস। বিটিআরসির হিসাব বলছে, ডিসেম্বরের শেষে দেশে কার্যকর ইন্টারনেট সংযোগ ছিল ৮ কোটি ৫ লাখ।

এদিকে জিএসএমএ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার ৪১ শতাংশে পৌঁছাবে যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কাছে থাকবে ফোরজি।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে জিএসএমএ দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি বলে দাবি করেছে। তবে বিটিআরসির হিসাব সাড়ে চৌদ্দ কোটিরও বেশি কার্যকর সংযোগ দেশে চালু আছে।

আর সে কারণে বিটিআরসির হিসাবে মোবাইল ফোনের প্যানিট্রেশন ৮৬ শতাংশের বেশি হলেও জিএসএমএ তা অর্ধেকের বেশি বলছে না। তবে ২০২৫ সাল নাগাদ দশ কোটি ৭০ লাখ লোকের হাতে মোবাইল থাকবে বলেও বলছে বিশ্বের অপারেটরদের এ সংগঠনটি।

Back to top button