অর্থ-বাণিজ্য

ডিপিডিসির নামে হয়রানির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:ডিপিডিসির হয়রানির অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের দৃষ্টিতে এসেছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বিষয়টিকে গুরুতর অন্যায় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে এখনও এসব বিষয়ের কোনও সুরহা হয়নি। সচিব বিনামূল্যে জমি না নিয়ে জমির দাম দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

ডিপিডিসিশিল্প সংযোগে গ্রাহককে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিরুদ্ধে। পাঁচ মেগাওয়াট বিদ্যুতের বেশি চাহিদার সংযোগ নিতে চাইলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। অনেকক্ষেত্রে নিজেদের জমি ডিপিডিসিকে বিনামূল্যে লিখে না দিলে সংযোগ পাচ্ছেন না তারা।

বড় গ্রাহকের কাছ থেকে জমি নিজেদের কোম্পানির নামে বিনামূল্যে রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। খোদ ডিপিডিসি মন্ত্রণালয়ের কাছে শিল্প সংযোগের যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে কার কাছ থেকে কি পরিমাণ জমি নেওয়া হয়েছে তার বিবরণ রয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, পাঁচ মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার গ্রাহক আসলে তাদের বলা হচ্ছে আপনাকে বিদ্যুৎ নিতে হলে সরবরাহ লাইনটি সাবস্টেশন থেকে আপনার আঙিনা পর্যন্ত নিজের নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রাস্তা কেটে লাইন নির্মাণ করা অনেকটাই অসাধ্য বিষয়। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন দফতর ঘুরে গ্রাহকরা ব্যর্থ হয়ে আবার ডিপিডিসির কাছে যান। তখন তারা দাবি করছে তাহলে আপনার আঙিনায় আমরা একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করে দেই। সেখান থেকে ওই গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়ার পাশাপাশি অন্য গ্রাহককেও বিদ্যুৎ দেয়া হবে। গ্রাহক শুরুতে তার মূল্যবান জমিতে এ ধরনের সাবস্টেশন নির্মাণের অনুমোদন দিতে না চাইলেও এক সময় আর উপায় থাকে না। ফলে বিনামূল্যে জমি দিতে বাধ্য হন। এভাবেই বড় গ্রাহকের আঙিনায় বিনা পয়সার জমিতে সাবস্টেশন নির্মাণ করে ডিপিডিসি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মালিককে যে সুবিধা দেওয়ার কথা তা না দিয়ে দান হিসেবে নিজেদের নামে জমি লিখে নেয় ডিপিডিসি।’

শুধু উদ্যোক্তা নয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও কৌশলে জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। অন্য বিতরণ কোম্পানি সরকারি আইন মেনে জমি অধিগ্রহণ করলেও ডিপিডিসিতে তার কোনও বালাই নেই। যদিও গ্রাহকরা হয়রানির ভয়ে এসব বিষয়ে মুখই খুলতে চান না।

দ্রুত শিল্পায়নের জন্য সরকার যেখানে শিল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ সহজ করার কথা বলছে। সেখানে ডিপিডিসি হাঁটছে উল্টো পথে। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ডিপিডিসি।

ডিপিডিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) নিহাররঞ্জন সরকারের সই করা যে বিবরণ প্রতিষ্ঠানটি মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে তাতে দেখা যায়, রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের কাছ থেকে ১১০৫ বর্গফুট, বোরাক রিয়েল এস্টেট এর কাছ থেকে ১০০৮ বর্গফুট, জেনেটিক ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে ৩৭৫ বর্গফুট জমি নিজের নামে লিখে নিয়েছে ডিপিডিসি।

হাজি হাশেম স্পিনিং মিল ১৩২০ বর্গফুট, মেসার্স জহির স্টিল অ্যান্ড রিরোলিং মিল দশমিক ৪১৩৭ একর, আমুলিয়া মডেল টাউনের কাছ থেকে দশমিক ৫৭৯৩ একর, সিটি গ্রুপের কাছ থেকে দশমিক ৯২১ একর, ড্যানিশ কনডেন্সড মিল্কের কাছ থেকে দশমিক ১২৫২ একর জমি নেওয়ার জন্য সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই হয়েছে। এছাড়া মাদানী নগর হাউজিং থেকে দশমিক ১৫ একর, শাহ সিমেন্টের কাছ থেকে দশমিক ৬১০৫ একর জমি বিনামূল্যে নেওয়া হয়েছে।

তবে একই কাগজে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে দশমিক ২২৩০ একর জমি নেওয়ার জন্য এক কোটি টাকা প্রতীকী মূল্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে দশমিক ৪৯৫০ একর জমি নেওয়ার জন্য বার্ষিক খাজনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছ থেকে ৬৫৯ বর্গফুট, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দশমিক ১১০৮ একর এবং আদমজী রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার কাছ থেকে দশমিক ৩৮৯৯ একর জমি নেওয়ার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তবে এসব জমি সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিজেদের নামে বিনামূল্যে লিখে না নিয়ে ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে সাবস্টেশন নির্মাণ করেছে ডিপিডিসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাহক জানান, তারা নিজেদের কারখানার জন্য প্রথমে সংযোগের আবেদন করেন। ডিপিডিসির পক্ষ থেকে নিয়ম অনুযায়ী তাদের নির্ধারিত সাবস্টেশন থেকে লাইন করে নিতে বলা হয়। কিন্তু যে সাবস্টেশনের কথা বলা হয় সেটি সাধারণত এত দূরে হয় যে, সেখান থেকে লাইন টানা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে গ্রাহক বাধ্য হয়ে নিজের আঙিনায় সাবস্টেশন করাটা ব্যয় সাশ্রয়ী বলে মনে করে। এক্ষেত্রে ডিপিডিসি আবার জমি নিজেদের নামে করিয়ে নিতে চায়। ফলে গ্রাহক বিদ্যুতের লাইনের জন্য নিজের জমি ডিপিডিসির নামে দিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে কখনো একেবারে বিনা পয়সায়, আবার কখনো কখনো জমি নামমাত্র মূল্যে বদল হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘বিষয়টি ঠিক নয়। অনেক সময় দেখা যায় যে গ্রাহকদের চাহিদা ৫০ কিলোওয়াটের বেশি। সেক্ষেত্রে গ্রাহককে সাবস্টেশন থেকে কারখানা পর্যন্ত লাইন নিজেদের করে নিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের সব সাবস্টেশন থেকে এই পরিমাণ চাহিদার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। আমরা যে সাবষ্টেশন থেকে দিতে পারবো বলে জানাই অনেক সময় গ্রাহক সেখান থেকে লাইন নির্মাণ করতে চায় না। তখন তারাই সাধারণত তাদের আঙিনায় সাবস্টেশন করার প্রস্তাব দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে বিনামূল্যে কিছু হাউজিংয়ের জমিতে সাবস্টেশন করা হয়েছিল।এখন এ ধরণের কিছু হয় না। সম্প্রতি এ ধরনের কিছু করছি না আমরা।’

বিকাশ দেওয়ান বলেন,বিনামূল্যে জমি নেওয়ার বিষয়ে ‘আগে অনেক সময় বিনামূল্যে নেওয়া হতো। এখন আর হয় না।’ স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা এ ধরনের কিছু করি না। জায়গা থাকলে আমরা নিজেরাই করি। কিন্তু জায়গা না থাকলে আমরা তাদেরকে বলি। কদিন আগে আমাদের সঙ্গে ইস্পাহানির এ ধরনের কথা হয়েছে। তাদের চাহিদা ৩০ মেগাওয়াট। এত বিদ্যুৎ দেওয়ার মতো সাবস্টেশেন তো ডিপিডিসির নেই। তখন তারাই প্রস্তাব দিলো যে তাদের আঙিনায় সাবস্টেশন করার। আমরা নামমাত্র মূল্যে জমি কিনে নিয়েছি।

Back to top button