আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর নাম মুছতে শুরু করেছে মিয়ানমার: একই পথে হাঁটছে জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তিন বছর আগে রোহিঙ্গাদের গ্রাম কান কিয়া পুড়িয়ে দেয়ার পর বাকিটুকু বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, গত বছর সরকার মানচিত্র থেকে গ্রামটির নাম বাদ দিয়ে দেয়।

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য আর বাংলাদেশের মাঝখানে সীমারেখা নাফ নদী থেকে মাত্র তিন মাইল ভেতরে এই কান কিয়া গ্রামের অবস্থান, যেখানে বহুশত রোহিঙ্গার বাস ছিল। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিধন অভিযান চালিয়ে ৭৩০,০০০ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এখন গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। যদিও তারা দাবি করেছে যে, গেরিলাদের বিরুদ্ধে তারা শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছিল।

কান কিয়া গ্রামের জায়গাটাতে এখন কয়েক ডজন সরকারী ও সামরিক বাহিনীর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, পুলিশের ঘাঁটি বসানো হয়েছে বলে স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যাচ্ছে। বিদেশীদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই, এবং গ্রামটা এতটাই ছোট যে গুগল মানচিত্রেও এর নাম নেই।

জাতিসংঘের মানচিত্র প্রস্তুতকারীরা জানিয়েছে, ২০২০ সালের যে মানচিত্র তৈরি করেছেন তারা, সেটা সরকারের মানচিত্রের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে, এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামটির এখন আর মানচিত্রে নেই এবং কাছের মংডু শহরের সাথে সেটাকে সংযুক্ত দেখানো হয়েছে। এই ইউনিটটি শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতো জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ব্যবহারের জন্য মানচিত্র তৈরি করে থাকে।

দ্রুত নির্মাণ চলছে

বৌদ্ধরা মিয়ানমার মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে আসছে। অনেকেই বলে থাকেন যে, তারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে এসেছে, যদিও মিয়ানমারে তাদের উপস্থিতি বহু শতাব্দি ধরে রয়েছে। মিয়ানমার বলেছে শরণার্থীদের জন্য তাদের দরজা খোলা, কিন্তু তাদেরকে একটা শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আসতে হবে।

মিয়ানমার আর বাংলাদেশের মধ্যে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের আলোচনা থমকে আছে। সম্প্রতি কযেক ডজন শরণার্থী মিয়ানমারে ফেরার চেষ্টা করলে তাদেরকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ অভিযোগে আটক করা হয় এবং তারা করোনা ছড়াতে পারে বলে উদ্বেগ জানানো হয়।

সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক বেসরকারী স্যাটেলাইট অপারেটর প্ল্যানেট ল্যাবস এবং গুগল আর্থে দেখা গেছে যে, ২০১৭ সালে যে সব গ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, এ রকম অন্তত এক ডজন গ্রামে দ্রুত ভবন নির্মাণ করছে মিয়ানমার। নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাঁটি, সরকারী ভবন ও বৌদ্ধদের জন্য আবাসস্থল নির্মাণ করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে কান কিয়া গ্রামে নির্মানকাজ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে গোন নার গ্রামের উপর দিয়ে। এই গ্রামটির নামটাও মুছে দিয়ে সেটাকে মংডু শহরের সাথে যুক্ত দেখানো হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামে নিরাপত্তা ঘাঁটি গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলেও এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র। স্থানীয়দের মতামতের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

দেয়াল আর প্রহরী-টাওয়ার

জাতিসংঘ জানিয়েছে আরও ১১টি গ্রামের নাম মুছে দিয়ে সেগুলোকে নতুন গঠিত শহর মাইন লুতের ওয়ার্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেখানে সৈকত ও সি-ফুড পর্যটন রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন সরকারের এক মন্ত্রী।

উপকূলবর্তী এই ছোট ছোট গ্রামগুলো মূলত ২০১৭ সালের নিধন অভিযানের সময় ধ্বংস করা হয়। দুটো গ্রাম কিছুটা অক্ষত থাকলেও ২০১৮ সালে সেগুলো বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই এলাকায় ছয়টি নতুন গার্ড স্টেশান আর ওয়াচ-টাওয়ার বসানো হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষক এ তথ্য জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর নাম মুছে যাওয়ার পাশাপাশি বৌদ্ধ বসতির দুটো নতুন গ্রামের নাম যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘের ২০২০ সালের মানচিত্রে।

ইন দিন গ্রামে ২০১৭ সালে ১০ জনকে হত্যা করেছিল সেনারা। গ্রামের ৬০০০ রোহিঙ্গারা তখন পালিয়ে যায়। তাদের ঘরবাড়িগুলো ধ্বংস করে সেনাবাহিনী।

রয়টার্স ২০১৮ সালে জানায়, ওই এলাকায় এখন বৌদ্ধদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করেছে রাখাইন রাজ্য সরকার। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে জায়গাটা আরও বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে পাশের বৌদ্ধ বসতি কিয়াউক পান্ডু আগের চেয়ে আকারে দ্বিগুণ হয়েছে।

Back to top button