বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবার নীতিমালা কবে?

নিউজ ডেস্ক:  সম্প্রতি দেশের একটি বহুজাতিক মার্কেটপ্লেসে একটা কাজ পেতে আবেদন করে দেশীয় ইনশিওরটেকভিত্তিক (ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবা) একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দেশে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স সেবা সংক্রান্ত কোনও নীতিমালা নেই। এ কারণে ওই মার্কেটপ্লেসটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশি ইনশিওরটেক প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিতে পারেনি।

এ ঘটনার ফলে প্রশ্ন উঠেছে- কবে দেশে ইনশিওরটেক নীতিমালা হবে? যেহেতু খাতটি বিকাশমান, প্রবৃদ্ধি ভালো, ফলে এটি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। ফলে তারা বলছেন, এখনই সময় নীতিমালা তৈরির। তাহলে ইনশিওরটেক খাতটি একটি ভালো ভিত্তি পাবে। এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধ বলা না হলেও বলা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত কোনও ভিত্তি নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি কাঠামোয় আনতে তাই নীতিমালা জরুরি।

ইনশিওরটেক কী?

ইনশিওরটেক হলো প্রযুক্তিভিত্তিক একটি যৌথ উদ্যোগ। যে কোনও একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইন্সুরেন্স কোম্পানি যুক্ত থাকে। কোনও পণ্য বা প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার নিরাপত্তার জন্য উদ্যোক্তারা বিমার ব্যবস্থা করেন। যাতে পরবর্তী সময়ে বিমা গ্রহীতা তার হাতে ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল সেবা নষ্ট হলে বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পান। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একজন ক্রেতা তার স্মার্টফোন কেনার সময় যদি কোনও বিমা সুবিধা কেনেন তাহলে বিমাকালীন সময়ে ফোনটির স্ক্রিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে তিনি বিমার শর্ত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। সেটা নগদ টাকাও হতে পারে, আবার ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসটি নতুন পেতে পারেন।

নীতিমালা কেন দরকার?

জানা গেছে, ইনশিওরটেক উদ্যোক্তারা বিষয়টি অনুধাবন করে একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে খসড়া তৈরি হয়েছে। সেই খসড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার ধর্মই হলো, আগে প্রযুক্তি সেবা চালু হয়, এরপর তৈরি হয় নীতিমালা। দেশেই আছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আমদানি, ইন্টারনেট সেবার সম্প্রসারণ, ই-কমার্স উদ্যোগ ইত্যাদির নীতিমালা। কিন্তু আগে দেশে চালু হয়েছে সেবাগুলো। পরে এসেছে নীতিমালা। ইনশিওরটেকও তেমনি। এটি একটি প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ। এই খাতটির সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য নীতিমালা তৈরির সময় হয়েছে। দেশে ইনশিওরটেকের সংখ্যা একাধিক। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশ কাজ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টাশিওর, আদর্শ প্রাণীসেবা, বীমাফাই, ছায়া, ওয়াদা ইত্যাদি।

জানতে চাইলে ইনস্টাশিওরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেল কবীর বলেন, নীতিমালা থাকা দরকার। নীতিমালা না থাকলে কাজ করা যায় না। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ দিতে চায় না। এটা একটা বড় সমস্যা এই খাতের জন্য। আমি মনে করি যে কোনোভাবেই হোক এটার একটা লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক থাকা দরকার। এমনকি শুধু ভারবাল (মৌখিক) একটা ডিক্লারেশন থাকলেও চলবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে এখন অর্থনীতির কোভিড চলছে। এই সময়ে অর্থনীতিকে স্বস্তি দিতে, শক্ত ভিত্তি দিতে পারে ইনশিওরটেক। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে ইন্সুরেন্সের হার শূন্য দশমিক শূন্য চার (০.০৪) শতাংশ। আমাদের আশেপাশের দেশগুলোতে যা ২২ শতাংশ পর্যন্ত আছে। সবমিলিয়ে গড়ে যা সাত শতাংশের মতো। ইনশিওরটেকের নীতিমালা এলে এই খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়বে। ইন্সুরেন্সের হারও বাড়বে।

অবৈধভাবে চলছে ইনশিওরটেক

জানা গেছে, বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান দেশে অবৈধভাবে ইনশিওরটেক পরিচালনা করছে। দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছে। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। লাইসেন্সিং ব্যবস্থা না থাকায় যে যার মতো করে কাজ করছে। একটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে এই খাতে। এটা ঠিক করতে কাজ করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসিসের ইনশিওরটেক সাব-কমিটি একটা খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। খসড়াটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইআরডিএ) কাছে শিগগিরই দেওয়া হবে।

ইনশিওরটেক নিয়ে বিশেষ সেমিনার

দেশের সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য নির্মাতাদের সংগঠন বেসিস ‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩’। চার দিনের এই প্রদর্শনীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হবে। বেসরকারিভাবে আয়োজিত এবারের প্রদর্শনী রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

বেসিস সফটিএক্সপোতে ইনশিওরটেক নিয়ে একটি বিশেষ সেমিনার করা হবে বলে জানা গেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিতব্য ওই সেমিনারে ইনশিওরটেক উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, স্টার্টআপ উদ্যোক্তা, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃপক্ষ-সহ খাত সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, এখনই আসল সময়। এটা (নীতিমালা) করতে হবে। দেশে ইনশিওরটেকে সম্ভাবনা আছে। একজন ব্যক্তি তার ডিজিটাল ডিভাইসের সুরক্ষা চায়। কোনও রাইড নিলে শুরু থেকে রাইডের শেষ সময় পর্যন্ত মাঝখানের সময়টার নিরাপত্তা (বিমা) চায়। ফলে প্রযুক্তিভিত্তিক বিমার কোনও বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, এ দেশে একটা গরুর বিমা পর্যন্ত হচ্ছে। ইনশিওরটেকের সম্প্রসারণের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। এটার যদি নীতিমালা তৈরি করা যায় তাহলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বা সেবার নিরাপত্তার জন্য ইনশিওরটেকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে। নীতিমালা না থাকলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এগোবে না।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নীতিমালা থাকা অবশ্যই দরকার। এটা করার এখনই সময়। যেহেতু এটা সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখা, সমস্যা দূর করার জন্য এটা লাগবেই। অন্যান্য দেশের নীতিমালা, উদাহরণ, অপারেশন প্রসিডিওর ইত্যাদি দেখে নীতিমালা তৈরি করা হলে এর সঙ্গে একটা আন্তর্জাতিক আবহ থাকবে। তার আগে ইনশিওরটেক ব্যবস্থায় এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, গ্রাহক এই বিমা সুবিধা কিনলে তিনি নিশ্চিতভাবে পণ্য বা সেবা বিনষ্ট হলে বিমার টাকা পাবেন বা পণ্যটির বাজার মূল্য ফেরত পাবেন। এটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে নীতিমালা তৈরি করলে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে।

Back to top button