সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দোকান বরাদ্দে অনিয়ম পায়নি পিবিআই
নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের সত্যতা পায়নি মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের দেওয়া এই প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১৭ ম) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ করে দেন।
২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় গত ৮ এপ্রিল সাঈদ খোকনসহ সাতজনকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করে প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক এ জেড এম মনিরুজ্জামান।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান ও ওয়ালিদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদ পরস্পর যোগসাজশে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূলভবনের নকশাবহির্ভূত অংশে স্থাপনা তৈরি করে দোকান বরাদ্দের ঘোষণা দেন। ঘোষণা শুনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান বরাদ্দ নেওয়ার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর ব্যবসায়ীরা আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদের কাছে যান। তারা বলেন- ‘আপনার টাকা জমাদানের ব্যবস্থা করুন। আমরা আপনাদের দোকান বরাদ্দ দিয়ে দেবো’। ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূল মার্কেটে যাদের নামে দোকান বরাদ্দ রয়েছে তাদের আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ভুল বুঝিয়ে এ মার্কেটে দোকান বরাদ্দ নিতে বাধ্য করেন। আসামি সাঈদ খোকন ও মাজেদসহ অন্যরা মিলে প্রতারণা করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং ব্যবসায়ীদের নকশাবহির্ভূত দোকান বরাদ্দ দেন।
মামলার অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, দোকান বরাদ্দের অনৈতিক আইনবহির্ভূত বিষয় জেনে মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেন দুলু আসামিদের দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অনৈতিকভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনে বাধা দেন। এরপর আসামিরা দেলোয়ারকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট আসামি ইউসুফ আলী সরদার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ বাদী দেলোয়ারকে বনানীতে ডেকে বলেন, ‘তুই ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, এর এক্সটেনশন ব্লক- এ, বি, সি এর দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করার প্রক্রিয়া বন্ধ কর, নইলে খুব খারাপ হবে।’
তবে তিনি নিজের ও পরিবারের কথা চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে সাহস পাননি। আসামি সাঈদ খোকন, ইউসুফ আলী সরদার ও মাজেদের নির্দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আসামি কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ দোকান বরাদ্দের কথা বলে বিনা রশিদে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করেন।
এতে আরও বলা হয়, সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিনা রশিদে বা কোনো প্রকার ডকুমেন্টস ব্যতীত আসামিদের নিকট বরাদ্দের বিষয়ে টাকা জমা দিয়ে প্রতারণার ভয়ে ভীত হয়ে মামলার বাদী দেলোয়ারের নিকট পরামর্শের জন্য আসেন। সেসময় তিনি তাদের বলেন যে, যেহেতু আপনারা অনেক টাকা এরইমধ্যে বিনা রশিদে নগদ প্রদান করেছেন এবং ভবিষ্যতেও টাকা জমা দেবেন, সেহেতু আইনগত প্রমাণ রাখার জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে তার প্রতিষ্ঠানের নামে ফুলবাড়িয়া উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে টাকা জমার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ভুক্তভোগীরা সাঈদ খোকনের অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ টাকা জমা দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের এখতিয়ারাধীন এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর এক্সটেনশন ব্লক এ, বি, সি এর স্থাপনা ভেঙে উচ্ছেদ অভিযান চালান। এই উচ্ছেদের বিষয়ে বাদী দেলোয়ারসহ অপর ব্যবসায়ীরা জানতে পারেন যে, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্য আসামিরা ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর এক্সটেনশন ব্লক এ, বি, সি এর মূলভবনের নকশাবহির্ভূত এবং অবৈধ উপায়ে অনৈতিকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য প্রতারণা করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেন।
আসামিরা অবৈধভাবে অনৈতিক উপায়ে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি করেন। অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন করায় দণ্ডবিধি ১৮৬০ সালের ৩৪/১০৯/১২০(খ)/৪০৬/৪১৭/৪৬৮/৪৭৭(ক) এবং ৫০৬ বিধান লঙ্ঘন করায় বাদী আদালতে এসে মামলা দায়ের করেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।