আইন-আদালত

বিয়ের বয়সে পুরুষরাও ছাড় পাবেন!

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বিয়ের বয়স নির্ধারণে পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ছাড় পাবেন। এমন বিধান রেখে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংসদে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস হয়েছে। এই বিল পাসের ফলে নারীদের মতো পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করার সুযোগ পাবেন।

Image result for সংসদ ভবন
বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিল পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন, রওশন আরা মান্নান।

তবে তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক ভোটে পাস হয়।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে গত ৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বাবা-মা’র সম্মতি অনুযায়ী বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিবাহ কার্যক্রম হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। যা আগে অপ্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের কথা উল্লেখ ছিলো। এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যেতে পারবে।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড হবে।

আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তারা এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সংসদে উত্থাপিত বিলে বাল্য বিয়ে পরিচালনা বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়। বাল্য বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাবা-মা সহ অন্যদের সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে একমাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।

বিলে বলা হয়েছে, বাল্য বিয়ের জন্য উদ্যোগী অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আদালতের নির্ধারিত ফরমে যদি মুচলেকা দেন যে, সে তার এলাকায় বাল্য বিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হবেন এবং নিজে ভবিষ্যতে এ কাজে সম্পৃক্ত হবেন না তবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এই আইনের অধীন আরোপিত জরিমানা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

বিলে বলা হয়েছে, আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য হবে। এ আইনের অধীনে বিচার হবে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ নিরোধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং শিশু আইন, ২০১৩ এ বর্ণিত শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯’ রহিতপূর্বক যুগোপযোগী ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বাল্যবিবাহ হলে প্রজনন স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যু প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর নিচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছরের বয়সীদের বিবাহের হার এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এরই অংশ হিসেবে এ আইন করা হয়।

Back to top button