আইন-আদালত

যে যুক্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়: আইনমন্ত্রী

Related image

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের প্রতি সরকার পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, যেসব যুক্তিতে ওই সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে; তা গ্রহণযোগ্য নয়।

গত ১ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায় প্রকাশের নয় দিন পর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান।

রায়ে প্রধান বিচারপতি সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির রায় যুক্তিপূর্ণ নয়, আবেগ ও বিদ্বেষপ্রসূত।

আগের দিন প্রায় একই ধরণের মন্তব্য করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ভুল করলে কোথায় যাবো? ষোড়শ সংশোধনীর রায় পড়ে মনে হয়েছে এ দেশ জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ হয়ে গেছে, পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ আর থাকছে না।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মামলার সঙ্গে রাজনীতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে দেয়া বক্তব্যকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ উল্লেখ করে সেগুলোকে এক্সপাঞ্জের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান আনিসুল হক।

তিনি বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে এখনো রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। আপাততঃ রায় নিবিড়ভাবে যাচাই করছি। রায় নিয়ে রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই। তবে রায়ে রাজনীতি নিয়ে যেসব অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য আছে সেসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং বিচারবিভাগের স্বাধীনতা-স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই সংশোধনী পাস করা হয়। কোন একক ব্যক্তির কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় নাই- প্রধানবিচারপতির এমন পর্যবেক্ষণে সরকার মর্মাহত। এই রায় আইনগতভাবেই মোকাবেলা করা হবে।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সামরিক শাসনের ধারণা থেকে আসা উল্লেখ করে তিনি বলেন,’ ৭২ এর সংবিধান অবৈধ হতে পারে না। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২ এর সংবিধানে ফেরাটা বহুলাংশে নিশ্চিত হয়েছিলো। এই সংশোধনীতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুদৃঢ় এবং স্বচ্ছ হতো। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ধারণাটি অত্যন্ত অস্বচ্ছ।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন,’ বিচার বিভাগের সঙ্গে সংসদ কোনো ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় নামেনি। আমরাই বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাশ করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়।
তবে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
এরপর হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। গত ৮ মে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের উপর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে আপিল বিভাগে মতামত উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০জন বিজ্ঞ আইনজীবী।

গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। আপিল খারিজের ওই রায়ের ফলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ই বহাল থাকে।

১ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় । সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায় প্রকাশ করা হয়।

চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের যে সংশোধন আনা হয় তা সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে রায়ে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।

Back to top button