স্বাস্থ্য

বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণা বড়দের মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে জিকা

02
বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রোগগুলোর মধ্যে একটি জিকা। সাধারণত গর্ভবতী নারীরা আক্রান্ত হয় এই ভাইরাসে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক। তবে এতোদিন জিকা ভাইরাস থেকে শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানা গেলেও এবার নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ভাইরাসটি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বড়দের মস্তিষ্কও।

ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জিকা ভাইরাস থেকে উৎপন্ন ‘অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেড ইনসেফালোমিয়েলিটিস’ (এডিইএম) নামের একটি স্বয়ংপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাধি বড়দের মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ডকে আক্রমণ করে।

এর আগে আরেক গবেষণায় দেখা যায়, স্বয়ংপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাধি ‘গিউলিয়ান বেয়ার’র সাথেও জিকা সম্পর্কিত। এই ব্যাধিটি মস্তিষ্কের বাইরে সীমান্তবর্তী স্নায়ু এবং সুষুম্নাকাণ্ডকে আক্রমণ করে। এতে রোগী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

নতুন এই গবেষণায় দেখা যায়, জিকা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপরও স্বয়ংপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন আক্রমণকেও উৎসাহিত করে। এছাড়া জিকার কারণে স্নায়বিক ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) মতে, গিউলিয়ান বেয়ারের পাশাপাশি জন্মের সময় শিশুর মাইক্রোসেফালি রোগ হতে পারে তবে এটা ধরা পড়তে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। মাইক্রোসেফালি রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর মাথা অত্যন্ত ছোট হয়ে থাকে। এতে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত হয়।

ব্রাজিল এ পর্যন্ত ৯৪০ জন মায়ের দেহে জিকার আক্রমণ খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়া সন্দেহের তালিকায় আছে আরো চার হাজার তিনশ জন।

উল্লেখ্য, গবেষকেরা প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করেন ১৯৪৭ সালে। আফ্রিকার দেশ উগাণ্ডার একটি বনের নাম জিকা। সে বনের বানর থেকে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয় বলে গবেষকেরা নাম দিয়েছেন জিকা ভাইরাস। ভাইরাসটি ছড়ায় এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমে। এই মশা, ডেঙ্গু ভাইরাসও ছড়ায়। জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমেও সুস্থ মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

মূলত দুই ধরণের এডিস মশা থেকে এই ভাইরাসটি ছড়ায়। গ্রীষ্মমণ্ডল ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলে Aedes aegypti মশার মাধ্যমে ছড়ায়, কারণ শীতপ্রধান অঞ্চলে এরা টিকে থাকতে পারেনা। Aedes albopictus মশাও এই রোগ ছড়াতে পারে।

এরা শীতপ্রধান অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। এরা একবারে একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।

ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কামড়ালে উক্ত মশাও ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। জিকা ভাইরাস শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে বলে আমেরিকাতে ধরা পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button