আন্তর্জাতিক

দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করে জনগণের শক্তি দিয়েই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তাঁর উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ বুধবার গণভবন থেকে ১৫টি জেলার সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে উজ্জ্বল, যখন আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, সেই সময় এ ঘটনা ঘটিয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা, দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে, বাংলাদেশকে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করতে হবে, মানুষের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি মনে করি আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় নেতারা, শিক্ষকেরা, অভিভাবকেরা, প্রশাসনে যারা কর্মরত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (যেমন: পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, আনসার-ভিডিপি), জনপ্রতিনিধিরা আছেন (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা এবং সংসদ সদস্যরা) এবং সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যাঁরা আছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।’

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্মেরই ক্ষতিসাধন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন মানুষের কল্যাণ হচ্ছে, মানুষের মধ্যে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে—ঠিক সেই সময় এ ঘটনাটা ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বের সামনে যেমন আমাদের হেয় করছে; সেই সঙ্গে আমি মনে করি, মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করে এই পবিত্র ইসলাম ধর্মকেই আজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমাদের এই পবিত্র ধর্মকে কেউ হেয় করবে, এটা আমরা বরদাশত করব না। প্রধানমন্ত্রী পিতা-মাতা, অভিভাবকদের নিজেদের সন্তানদের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে সবার সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি, কোর কমিটি গঠন করে আড়ালে-আবডালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করতে সবাইকে তৎপর হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি, ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে।’ এ সময় তিনি ঈদের জামাতে হিন্দু ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তাপ্রহরা দেওয়ার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে এটাকেই সব ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ এবং এই দেশ সাংবিধানিকভাবেই সব ধর্মাবলম্বীর আবাসস্থল বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সবাইকে সতর্ক করে দেন।

ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ ১৫ জেলার সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকেরা অংশ নেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button