জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পরে, খবর নেই রাজাকার তালিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের ২৫ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে সরকার। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে এক বছর। চার দফায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখনো সম্পন্ন হয়নি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের কাজ। বলা হচ্ছে, এ কাজ আটকে আছে আপিল নিষ্পত্তির জন্য। রাজাকারের তালিকা ২০১৯ সালে প্রকাশের পর স্থগিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি গত দুই বছরে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আপিল আবেদনগুলো নিষ্পত্তি হলে পূর্ণাঙ্গ তালিকার কাজ চূড়ান্ত হবে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মেয়াদ। তাই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।

অপরদিকে, ২০১৯ সালে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রবল আপত্তি ও সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয় সেই তালিকা। এখন রাজাকার, আলবাদর, আলশামস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের তালিকা করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নতুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন করা হচ্ছে। আইন চূড়ান্ত হলে এর ভিত্তিতেই রাজাকারের তালিকা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পূর্ণাঙ্গ নির্ভুল তালিকা করতে হয়নি দেশে। বহুবার তালিকা-সংযোজন বিয়োজন করে প্রকাশ করা হয়েছে। সব সরকারের সময় ক্ষমতার দাপটে কিছু লোক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধার মানদ- বদল হয়েছে বারবার।

মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যেটা এ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়েছে, সেটাই চূড়ান্ত। আমরা তাদের পরিচয়পত্রও দিচ্ছি। আপিলের ক্ষেত্রে যেগুলো রয়েছে, যেগুলো যাচাই-বাছাই হচ্ছে সেগুলোও আসবে।

খবর নেই রাজাকারের তালিকার:
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা ব্যক্তিদের সাধারণভাবে রাজাকার বলা হয়। পাকিস্তানিদের সহযোগী আরও দুটি সংস্থার নাম ছিল আলবদর ও আলশামস। পাকিস্তানিদের নানা অপকর্ম যেমন- হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন তারা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর এত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের তালিকা করা হয়নি।

শেষে ২০১৯ সালে বিজয় দিবসের আগের দিন (১৫ ডিসেম্বর) ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে ঘোষিত তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ও ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুসহ রাজশাহীর আরও দুই ব্যক্তির নাম রয়েছে ওই তালিকায়, যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে। এ নিয়ে সারাদেশে সমালোচনা শুরু হয়।

আপত্তি ও সমালোচনার মুখে তিনদিনের মাথায় রাজাকারের তালিকা স্থগিত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরবর্তীসময়ে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

Back to top button