পাঁচমিশালি

মহেশখালীতে হচ্ছে পাওয়ার হাব

Image result for মহেশখালী

মহেশখালীতে বিদ্যুতের পাওয়ার হাব তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য অধিগ্রহণ করা হবে ৫ হাজার ৫৮০ একর জমি। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এজন্য মহেশখালী পাওয়ার হাবের ভূমি অধিগ্রহণ শীর্ষক একটি প্রকল্প আজ বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপিত হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে একনেকের কার্যপত্রে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনের সদস্য মোস্তফা কামাল উদ্দীন উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে, সেখানে মোট ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট কয়লা ও এলএনজি-ভিত্তিক ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সহায়ক অবকাঠামো প্রস্তুত করা হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এজন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটের ওপর, যা বছরে ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুতের উত্তরোত্তর চাহিদা পূরণের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি পাওয়ার হাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ৯টি ব্লকে মোট ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ব্লকের প্রতিটিতে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল এবং একটি ব্লকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট এলএনজি-ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কয়লাভিত্তিক ৮টি ব্লকের মধ্যে একটি ব্লকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নের মাধ্যমে এখনই একটি বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া তিনটি ব্লকে তিনটি পৃথক বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিউবোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। একটি ব্লকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আলাপ-আলোচনা চলছে। এছাড়া অন্য ব্লকগুলোয় জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) বা অন্য কোনোভাবে প্লান্ট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া, হারিয়ার ছড়া, পানির ছাড়া, হোয়ানক, হেতালিয়া এবং অমাবশ্যাখালী মৌজায় ৫ হাজার ৫৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সূত্র জানায়, মাস্টার প্লান অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে দেশীয় ও আমদানি করা কয়লা ৫০ শতাংশ, দেশীয় ও আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি আকারে) ২৫ শতাংশ, তেল ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ আমদানি ও পারমাণবিক শক্তি থেকে ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা হবে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি মাস্টার প্লানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দীর্ঘমেয়াদি একটি পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া এবং এলএনজি কাতার বা অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানি করা হবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে ২৩ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া মাস্টার প্লান অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে আমদানিকৃত কয়লার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৮ সালের মধ্যে ৯টি ব্লকে মোট ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট কয়লা ও এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই এ প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Back to top button