আবহাওয়া

পানিবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রে

Related image

যুক্তরাষ্ট্রে পানিবায়ু পরিবর্তনের প্রচণ্ড বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশটির গড় তাপমাত্রা প্রচণ্ডভাবে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ১৫০০ বছরের মধ্যে দেশটির জলবায়ু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সবচেয়ে উষ্ণতম। দেশটির ফেডারেল সরকারের একটি খসড়া প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, প্রতিবেদনটি এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘আমেরিকানরা এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব অনুভব করতে পারছে।’

১৩টি ফেডারেল সংস্থা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এখনও এটি প্রকাশিত হয়নি বা ট্রাম্প প্রশাসন এর অনুমোদন দেয়নি। প্রতিবেদনটি ট্রাম্প ও তার মন্ত্রিসভা সদস্যদের দাবির সঙ্গে স্পষ্টত সাংঘর্ষিক। কারণ তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকার বিষয়টি নিশ্চিত নয় এবং এ পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বলতে পারার ক্ষমতাও সীমিত। তবে প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের পরিবেশের উপরিভাগ থেকে শুরু করে মহাসাগরের গভীরেও জলবায়ু পরিবর্তনের হাজারো প্রমাণ বিদ্যমান।’ প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ভূ-প্রকৃতি ও বাতাসের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে হাজার হাজার প্রামাণ্য গবেষণা চালানো হয়েছে। সারা বিশ্বের লাখ লাখ বিজ্ঞানী এ কাজ করেছেন। তারা যেসব প্রমাণ উপস্থিত করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিরূপ প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, তার জন্য মানুষের কর্মকাণ্ডই বিশেষ করে শিল্প-কারখানার গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনই দায়ী।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, মানুষ যদি এই মুহূর্তে পরিবেশে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করা পুরোপুরি বন্ধও করে দেয়, তারপরও বিশ্ব বর্তমানের তুলনায় এ শতাব্দীজুড়ে অতিরিক্ত অন্তত ০.৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অনুভব করবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে তাপমাত্রার প্রকৃত বৃদ্ধি ২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রায় অল্প একটু বৃদ্ধি পুরো জলবায়ুর ক্ষেত্রে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ বৈশ্বিক তাপমাত্রায় ১.৫ ডিগ্রি থেকে ২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধির কারণে আরও বেশি দাবদাহ, আরও তীব্র ঝড় মানুষ প্রত্যক্ষ করবে। এমনকি সমুদ্রে প্রবাল প্রাচীরের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাসেসমেন্ট বা জাতীয় জলবায়ু নিরূপণের অংশ এই খসড়া প্রতিবেদন প্রতি চার বছর পরপর তৈরি করা হয়। ইতিমধ্যে ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এটিতে স্বাক্ষর করেছে এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতকারীরা এখন এটা প্রকাশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী সরকারি বিজ্ঞানীদের একজন টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাথরিন হেইহো প্রতিবেদনটিকে জলবায়ু বিজ্ঞানের প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ একটি প্রতিবেদন বলে অভিহিত করেছেন। প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অপর এক বিজ্ঞানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ও তার সহযোগীরা এই প্রতিবেদনটি প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। কেননা সোমবার রাতে ইমেইলের মাধ্যমে অনুমোদনের আবেদন জানানোর পর হোয়াইট হাউস এবং এনভার্নমেন্ট প্রটোকশন এজেন্সি (ইপিএ) এ ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি ফেডারেল সংস্থার মধ্যে ইপিএ অন্যতম এবং আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে তাদের অবশ্যই অনুমোদন করতে হবে। তবে ইপিএ’র পরিচালক স্কট প্র“ইট বলেছেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডই যে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান উপাদান এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। তার পরও ২০১৫ সালে গৃহীত বৈশ্বিক উষ্ণতাবিষয়ক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। গত শুক্রবার জাতিসংঘের কাছে এক নোটিশ পাঠানোর মধ্য দিয়ে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিজ স্বার্থ সংরক্ষণে তারা আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেয়া অব্যাহত রাখবে।

Back to top button