অর্থ-বাণিজ্য

৬ ব্যাংক ‘নিরাপত্তা সঞ্চিতি’ পূরণে ব্যর্থ

ঢাকা : বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ৬ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চের প্রান্তিক থেকে এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে জনতা ও প্রিমিয়ার ব্যাংক।

বাকিগুলোর মধ্যে আগের প্রান্তিকের তুলনায় ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কমলেও বেড়েছে বেসিক, সোনালী ও কমার্স ব্যাংকের। সংশ্লিষ্টদের দাবি, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে প্রয়োজনীয় প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ছে, যে কারণে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিকভাবে প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমেছে। আলোচ্য সময়ে ৩৩ হাজার ৬১৫ কোটি ৬৭ হাজার কোটি টাকা প্রভিশনের বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চ শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ৫৭১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বেসিকের ৩ হাজার ৬৭৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ২৩০ কোটি ৬৬ টাকা ঘাটতি রয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিকের ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা ও সোনালীর ১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১ হাজার ২০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা প্রভিশন অতিরিক্ত রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে কমার্স ব্যাংকের ২৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এই দুই ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কমার্স ব্যাংকের ২২৩ কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৫৫ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।

প্রসঙ্গত, বিতরণকৃত ঋণের ঝুঁকি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক কোম্পনি আইন অনুযায়ী, প্রভিশনে ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এ ছাড়া টানা দুই বছর ঘাটতি থাকলে বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রভিশন ঘাটতি পূরণের সুযোগ পেতে পারে।

প্রভিশন ঘাটতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হওয়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার ফজলে রশিদ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়, এর মধ্যে একটি খেলাপি ঋণ। খেলাপি যত বাড়ে, প্রভিশন তত বেশি সংরক্ষণ করতে হয়। সবসময় এটা হয়ে ওঠে না।’

তিনি জানান, প্রভিশন ঘাটতি পূরণে প্রিমিয়ার ব্যাংক তিন বছরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছর থেকে এ সময় কার্যকর হবে।’

তবে জনতা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আব্দুস সালামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৫৯ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা গিয়ে ঠেকেছে, যা মোট অনাদায়ী ঋণের ৯.৯২ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button