কৃষি

হাওর ও চরাঞ্চলে ১৮৪৫ কোটি টাকার ২ প্রকল্প

Image result for হাওর

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পৌনে চার বছর পর হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে হাওরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৮৮টি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে।

অপরদিকে ১২ ধরনের কর্মপন্থার মাধ্যমে ১১ জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে শিশুদের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আলাদা দুটি প্রকল্প নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। দুই প্রকল্পের অর্থের সংস্থান হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিউদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।

জানা গেছে, চরাঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে ১২ দফা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশের ১১ জেলার বিভিন্ন চরের ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন চরে ১২টি স্কুল আছে।

এছাড়া গাইবান্ধায় ৬টি, টাঙ্গাইলে ৩টি, শরীয়তপুরে ৬টি, মুন্সীগঞ্জে ২টি, ফরিদপুরে ৯টি, মাদারীপুরে ৩টি, নোয়াখালীতে ৫টি, চাঁদপুরে ৩টি, ভোলায় ৪টি এবং পিরোজপুরে ১টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার মানোন্নয়নে নেয়া ১২ পদক্ষেপগুলো হল- মিড-ডে মিল চালু, জীবনদক্ষতা বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীর ফলের ভিত্তিতে প্রণোদনা পুরস্কার প্রদান, বিদ্যুৎবিহীন প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামোতে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন শ্রেণীকক্ষ তৈরি, ক্রীড়াসামগ্রী ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি প্রদান, যাতায়াতের জন্য নৌকা ক্রয় বাবদ অনুদান, শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই প্রদান এবং নিয়মিত বই পড়ার আয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রদান, প্রকল্পের প্রভাব বিশ্লেষণ করে গবেষণা পরিচালনা এবং আসবাবপত্র সরবরাহ।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয়ভার বহন করা হবে। আসন্ন জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সতর্কতার সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্প এর আগে এ বিভাগ থেকে বাস্তবায়ন হয়নি।

চিহ্নিত জেলাগুলো অনগ্রসর হিসেবে সরকারের গেজেটে উল্লেখ আছে কি না, তা আগে নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। বিপরীত দিকে ভবিষ্যতে অন্য এলাকায়ও এ জাতীয় চাহিদা দেখা দেবে।’

২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি চরাঞ্চলে দরিদ্র শিশুদের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

১৮৮ হোস্টেল : হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষার অধীনে আনতে ১৮৮টি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। এ ব্যাপারেও ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়ে যান। সে অনুযায়ী ১ হাজার ৬৮১ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। জুলাই থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের বাস্তবায়ন এলাকা হিসেবে এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার ৪৭টি উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল বাছাই করা হয়েছে।

ওইসব এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে ৫তলা ভিতের ওপর ৫তলার ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ১৮৮টি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। ওইসব হোস্টেলে প্রয়োজনীয় আসবাব এবং ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারের তৈজসপত্রও সরবরাহ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ৪ এপ্রিল এ দুই প্রকল্প নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয়, প্রকল্প এলাকা নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়নি।

এ বিষয়ে ডিপিপিতেও (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) কোনো নির্দেশনা নেই। যদিও ৪ জানুয়ারি আরেক বৈঠকে উল্লিখিত ৪৭ উপজেলার একটি করে বালক ও বালিকা বিদ্যালয় এবং একটি কলেজ অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ এবং ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়ন’ নামে পৃথক দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ওই দুই প্রকল্পেও হাওর অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, হোস্টেল নির্মাণের মতো কর্মসূচি আছে। এ কারণে প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, বৈঠক থেকে সুষ্ঠুভাবে হাওর অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মহিউদ্দিন খানকে। এতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, ব্যানবেইস পরিচালক, মাউশির সংশ্লিষ্ট পরিচালক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখার দু’জন কর্মকর্তা আছেন।

Back to top button