অর্থ-বাণিজ্য

তিন বছরের প্রকল্প ৬ বছরে বাস্তবায়ন!

অর্থের সংস্থান ছাড়াই গ্রহণ করা হয় ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষা সুবিধাদি উন্নয়নকল্পে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয়’ প্রকল্পটি। তাই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায় ৩ বছরের প্রকল্প শেষ করতে সময় লেগেছে ৬ বছর। এজন্য বেতন ও ভাতা, যানবাহন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে হয়েছে অতিরিক্ত অর্থ। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে ব্যয় করা অর্থের উপযোগিতা প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

সম্প্রতি প্রকল্পটি পরিদর্শন করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংস্থাটি বলেছে, অতি আবশ্যক না হলে অন্যান্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে মেয়াদ বৃদ্ধির এ সংস্কৃতি পরিহার করা উচিত। এ প্রসঙ্গে আইএমইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের জন্য ২০০৯ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১২ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু যথাসময়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত করা যায়নি। ২০১৫ সালের জুন মাসে বাস্তবায়ন শেষ হয়। এ সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৭০ কোটি ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বাস্তবায়ন দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে ৩৭ কোটি ২৬ লাখ ৪ হাজার টাকা। আইএমইডি বলছে, সমাপ্ত হওয়ার পর চলতি বছরের ২৫ আগস্ট, ৩ সেপ্টেম্বর, ২৯ অক্টোবর এবং ২৭ অক্টোবর প্রকল্পটি পরিদর্শন করা হয়। এ সময় দেখা যায়, মূল প্রকল্পটি ৩ বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ৩ বছর বৃদ্ধি করা হয়। ফলে মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছে শতভাগ।

সাধারণভাবে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও কিছু খাতে (যেমন বেতন/ভাতা, যানবাহন পরিচালনা ইত্যাদি খাতে) সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া প্রকল্পের আওতায় ক্রয়কৃত বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ইস্যু রেজিস্টারে এন্ট্রি না করেই বিভিন্ন বিভাগে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের আওতায় কেনা যন্ত্রপাতি কোথায়, কোনটি কী অবস্থায় আছে তা পরিদর্শনের সময় বের করা কষ্টসাধ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট কতটি কোন ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে সরবরাহ করা হয়েছে এবং তার মধ্যে কোনটি কোথায় ব্যবহার হচ্ছে তার একটি বিস্তারিত বিবরণ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে এবং দ্রুত আইএমইডিতে পাঠাতে বলা হয়েছে। তিন বছরের প্রকল্প ছয় বছরে শেষ হওয়া প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত এডিপি বরাদ্দ না পাওয়া। এজন্য ভবিষ্যতে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) ভুক্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে প্রকল্প গ্রহণের সময়ই সম্পদের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রকল্পের চাহিদা ঠিক করতে হবে।

এ ছাড়া বলা হয়েছে, প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাস পর আইএমইডিতে প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন (পিসিআর) জমা দেয়ার কথা থাকলেও এ প্রকল্পের ক্ষেত্র পিসিআর জমা দিতে সময় লেগেছে ১ বছর ৪ মাস, যা কাম্য নয়। ভবিষ্যতে পিসিআর আবশ্যিকভাবে জমা দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী ভূমিকা পালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একটি দেশের উন্নয়নের প্রকৃতি ও ধরন ওই দেশের শিক্ষার ধরন এবং গুনগতমানের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বর্তমানে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি পাবলিক এবং ৫৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অর্থে পরিচালিত হয়। কিন্তু সরকারের যে বরাদ্দ তা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত নয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সম্ভব হয় না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতির চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল।

প্রকল্পের আওতাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সিলেট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাজী মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button